চন্দ্রদ্বীপ নিউজ :: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের দুইজনসহ নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এ মন্ত্রিসভায় শপথ রয়েছেন আরো ১৪ গুণীজন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টায় বঙ্গভবনে শপথ নেন মন্ত্রিসভার প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা।
৪ নারীসহ মন্ত্রিসভার উপদেষ্টাদের পরিচয়
অধ্যাপক আসিফ নজরুল::
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ, লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি-বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।
আসিফ নজরুলের জন্ম ১৯৬৬ সালের ১২ জানুয়ারি। তিনি ১৯৯৯ সালে সোয়াস (স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ) ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে জার্মানীর বন শহরের ইনভাইরনমেন্টাল ল’ সেন্টার থেকে তিনি পোস্ট ডক্টরেট ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে একজন কমনওয়েলথ ফেলো হিসেবেও কাজ করেন।
আদিলুর রহমান খান ::
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আদিলুর রহমান খান পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও মানবাধিকার বিষয়ে একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন মানবাধিকার কর্মী।
১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এরশাদ বিরোধী গণ-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মানবাধিকার সংস্থা অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।
এ.এফ. হাসান আরিফ ::
এ.এফ. হাসান আরিফ একজন আইনজীবী, বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি, এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন।
মো. তৌহিদ হোসেন ::
মো. তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের একজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার। তৌহিদ হোসেনের জন্ম ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত হোসেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানে তার প্রতিপক্ষ রিয়াজ মোহাম্মদ খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের আয়োজন করেন ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন::
এম সাখাওয়াত হোসেন ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) । তিনি ৩২ টিরও বেশি বই লিখেছেন এবং নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হিসাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টেলিভিশনে কলামিস্ট এবং ফ্রিল্যান্স ভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেছেন।
হোসেন ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের পূর্ব বাংলার বরিশালে একটি সুপরিচিত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে পিএমএ , কাকুল থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন । ১৯৭২ সালে দেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
সুপ্রদীপ চাকমা ::
সুপ্রদীপ চাকমা বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত। তিনি ২০২৩ সালে ৈপার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পন।
সুপ্রদীপ চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কমলছড়ি গ্রামে। চাকুরিকালে তিনি মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা ও কলম্বোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিভিন্ন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফারুক-ই-আজম ::
মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে আক্রমণের জন্য গঠিত একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট অভিযানিক দলের উপ-অধিনায়ক ছিলেন ফারুক-ই-আজম।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকালে ফারুক-ই-আজম উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ওই সময় তিনি খুলনায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তিনি চট্টগ্রামে পৌঁছান।
আ.ফ.ম খালিদ হাসান ::
আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন একজন বাংলাদেশি সুন্নি দেওবন্দি ইসলামী পণ্ডিত। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা। মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক। বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কুরআনিক সায়েন্সেস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অতিথি শিক্ষক।
তিনি ওমরগণি এম.ই.এস. কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের খণ্ডকালীন অধ্যাপক এবং নেজামে ইসলাম পার্টির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।
অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় ::
অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। তিনি ময়মানসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬৩ সালে সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সুনামগঞ্জ জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবি.বিএস সম্পন্ন করেন।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ::
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর (দরিশ্রীরামপুর) গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। পরে তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডারে যোগ দেন।
তিনি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’-এর নবম গভর্নর। ২০০৫ সালের ১ মে গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব লাভ করে ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ::
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী হিসেবে পরিচিত। তার পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে যোগ দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-তে।
এখন পর্যন্ত তার পরিবেশ নিয়ে করা বিভিন্ন কাজের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ পুরস্কার, রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার, গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ সহ দেশ বিদেশে নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।
ফরিদা আখতার ::
ফরিদা আখতারের জন্ম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার হারলা গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা জানা এবং পরিবর্তনের জন্য নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও লেখালেখিই তার কাজের প্রধান জায়গা।
নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন।
নুরজাহান বেগম ::
চট্টগ্রাম জেলার জোবরা গ্রামে ১৯৭৬ সালে যখন গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প শুরু করেন ড. মোহম্মদ ইউনূস তখন তার একজন সহকারী হিসেবে কাজ করেন নুরজাহান বেগম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে দরিদ্র গ্রামীণ মহিলাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অবসরে গেলে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবেও কাজ করেন। পরে ৩৫ বছরের কর্মজীবন শেষ করে ১৪ আগস্ট ২০১২ সালে অবসরে যান।
শারমিন মুরশিদ ::
শারমিন মুরশিদ বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সময় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার নানা অনীয়ম নিয়ে কথা বলেন। দেশি বিদেশী গণমাধ্যমে তার মতামত ও পরামর্শ গুরুত্ব সহকারে প্রচার হয়। সবশেষ ৭ জানুয়ারি ২০২৪ এর নির্বাচন বিষয়ে আমেরিকার একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন আমি এই নির্বাচনকে নির্বাচন বলি না। বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়।