শিরোনাম

অর্থের অভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত গুলিবিদ্ধ বরগুনার রেদোয়ান

Views: 40

বরিশাল অফিস :: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ববরণের শঙ্কায় পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেদোয়ান। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছে না তার পরিবার। রেদোয়ান বরগুনা সদর উপজেলার কেওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কেওরাবুনিয়া নামক এলাকার বাসিন্দা মো. মাইন উদ্দিনের ছেলে। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১ দিন আগে ৪ঠা আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার সড়কে নামেন রেদোয়ান। এ সময় আন্দোলনকে প্রতিহত করতে পুলিশের ছোড়া গুলি পায়ে লেগে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুরুতর আহত হয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়লে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকার মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি বরগুনায় চলে আসেন বাবা মাইন উদ্দিন। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারলে পা হারাতে হতে পারে ভুক্তভোগী রেদোয়ানের।

সরজমিন বরগুনা সদর উপজেলার কেওরাবুনিয়া নামক এলাকায় রেদোয়ানের গ্রামের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, টিনের তৈরি ঘরের সামনের বারান্দায় একটি খাটের উপর পায়ে ব্যান্ডেজ অবস্থায় শুয়ে আছেন আহত রেদোয়ান। ডান পায়ের মাংসপেশি ছেদ করে গুলি বেরিয়ে যাওয়ায় হাড়ের কোনো ক্ষতি না হলেও ছিড়ে গেছে পায়ের বেশ কয়েকটি রগ।

রেদোয়ানের বাবা মাইন উদ্দিন এক সময় স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে কেওরাবুনিয়ায় নিজের ঘরে একত্রে বসবাস করলেও সংসার ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে চাকরি নিয়েছেন ঢাকার একটি হোটেলে। ছেলের পায়ে গুলি লাগায় এখন বাধ্য হয়েই কর্মস্থল ছেড়ে বাড়িতে আসতে হয়েছে তাকে।

একদিকে আর্থিক অসচ্ছলতা অপরদিকে ছেলের চিকিৎসা খরচ সব মিলিয়ে এখন না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে তাদের। এ ছাড়া আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কেউ তাদের কোনো সহযোগিতা না করায় ধারদেনা করেই ছেলের চিকিৎসা খরচ চালাতে হচ্ছে মাইন উদ্দিনকে।

রেদোয়ানের দাদা মো. নিজাম খান বলেন, গত ৪ তারিখ ঢাকায় আমার নাতির পায়ে গুলি লেগেছে। এখন তার যে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন সেই সামর্থ্য আমাদের নেই। জাকির মৃধা নামের রেদোয়ানের এক প্রতিবেশী বলেন, রেদোয়ান গুলিতে আহত হয়ে এখন প্রায় পঙ্গু অবস্থায় ঘরে পড়ে আছে। তার দুটি বোন আছে তাদের বিয়ে হলে এবং তার বাবাও বৃদ্ধ হয়ে যায় তাহলে পরিবারের হাল ধরার জন্য রোদোয়ান ছাড়া আর কেউ থাকবে না। উন্নত চিকিৎসার অভাবে যদি ছেলেটার পা হারাতে হয় তাহলে তাদের পরিবারটি একদম শেষ হয়ে যাবে।

চিকিৎসা খরচ নিয়ে চিন্তিত রেদোয়ানের বাবা মাইন উদ্দিন বলেন, ছেলের পায়ে গুলি লাগার পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু সেখানে থেকে চিকিৎসা করতে অনেক খরচ। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ বেশি টাকা খরচ করতে না পেরে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে এসেছি। তবে ডাক্তার বলেছে ওর পায়ের বেশ কয়েকটি রগ ছিড়ে গেছে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। আমার ছেলে এখনো পা সোজা করতে পারে না। ধারদেনা করে কিছু টাকা জোগাড় করেছি তা নিয়েই এখন ঢাকায় রওয়ানা হবো।

গুলিবিদ্ধ রেদোয়ান বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিপরীত দিকে অবস্থান নেয়া পুলিশ ও ছাত্রলীগের ছোড়া গুলি আমার পায়ে লেগে গুরুতর আহত হই। পরে আমাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল খরচ আমরা নিজেরাই বহন করেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেউ অথবা অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ এখন পর্যন্ত আমাকে কোনো সহযোগিতা করেনি।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিয়া বলেন, আহত রেদোয়ানের বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নেবো। এর আগে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বরগুনায় যারা নিহত এবং আহত হয়েছিলেন তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়া যারা এখন আহত অবস্থায় আছেন তাদেরকে সুচিকিৎসার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *