মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
শুনানির শুরুতে রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী অনীক আর হক কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় নারায়ণগঞ্জে বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয় বছরের শিশু রিয়ার মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
এক পর্যায়ে আদালত বলেন, এসব মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক। তখন আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, নিঃসন্দেহে (দুঃখজনক)। একটা জীবন যখন চলে যায়, তখন কোনো পক্ষ থাকে না। আর এটা ছয় বছরের একটি শিশুর মৃত্যু।
তখন এই আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আমার কোর্টে ইমোশনাল বিষয় অ্যাড্রেস করব না। এই মৃত্যুর ঘটনায় আমরা খুব লজ্জিত।
এরপর আইনি দিক তুলে ধরে আইনজীবী অনীক আর হক শুনানিতে বলেন, পুলিশকে যদি গুলি চালাতেই হয়, তবে পা লক্ষ্য করে গুলি করতে হবে। রাতে ডাকাত ধরার ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে কেবল সরাসরি গুলি করতে পারবে।
আদালত বলেন, আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত না, যাতে জাতির ক্ষতি হয়।
অনীক আর হক বলেন, জাতির ক্ষতি বলতে শুধুমাত্র কিছু ভবন, স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি বুঝালে হবে না। জীবনের ক্ষতিও জাতির ক্ষতি। আগে বিক্ষোভ দমন বা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গরম পানি, মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করতো।
আদালত তখন বলেন, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। তার আগে মাইকিং করে সতর্ক করতে হবে। আমরা কেউই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছি না। পুলিশ কখন আর্মি কল করতে পারে, সেটিও আইনে বলা আছে। পুলিশকে যে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, তার ছবি খুব একটা প্রচারে আসেনি।
আইনজীবী অনীক আর হকের পর রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন। তিনি ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের বিষয়ে বলেন, ছয় সমন্বয়ককে যে হেফাজতে রাখা হয়েছে, এটা তো স্বীকৃত। আইন বহির্ভূতভাবে কাউকে এভাবে হেফাজতে রাখার সুযোগ নেই। আইনি ক্ষমতার বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। বলা হচ্ছে যে, তাদের (ছয় সমন্বয়ক) আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতে পারছেন। কিন্তু তারা (ছয় সমন্বয়ক) কার সঙ্গে দেখা করতে চান বা চান না, সেটি জানার কোনো সুযোগ নেই। তার মানে তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ চলছে।
আদালত বলেন, একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আটকাতে হবে। হয় রিমান্ডে নিতে হবে, নয়তো আদালতে তুলতে হবে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। শুনানিতে তিনি ছয় সমন্বয়কের জীবন ঝুঁকি ও হুমকির কথা তুলে ধরেন। আর এ কারণেই ডিবি তাদের হেফাজতে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তখন আদালত বলেন, তাদের যে মেরে ফেলবে, এই কথাটা তাদেরই বলতে হবে। সে তো আশ্রয় চায়নি।