শিরোনাম

আবারও আত্মহত্যা ববিতে: চার বছরে ঝরে গেল ৪টি প্রাণ

Views: 41

বরিশাল অফিস :: আত্মহত্যা প্রতিরোধে পৃথক কাউন্সিলিং দফতর চালু করার পরও আবারও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)তে। গত ৯ জুন রবিবার রাত সাড়ে ১২টায় একজন শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানালেন বরিশালের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল।

এই নিয়ে ববিতে চার বছরে চারজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ১১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুত্রে গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ববি’র বঙ্গমাতা আবাসিক হলের রিডিং রুমে শেফা নুর ইবাদী (২২) নামের এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নবম ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। শেফা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা হলের ১৪১১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলো বলে জানা যায়।

ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, বঙ্গমাতা হলের তৃতীয় তলায় রিডিং রুমের জানালার গ্রিলের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ওই ছাত্রীকে পাওয়া গেছে। তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এটা আদৌ আত্মহত্যা নাকি হত্যা? কিম্বা কি কারনে সে আত্মহত্যা করেছে এসব কিছুই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ বা ববি প্রশাসন। তার লাশ মর্গে রয়েছে। পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে পরবর্তি সিদ্বান্ত নেয়া হবে বলে জানালেন ওসি মুকুল।


তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রেমিকের সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় তাকে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করেছে শেফা।

এদিকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলো শেফা। “বৈষম্যমুলক কোটা বাতিল চাই ! মেধা ভিত্তিক নিয়োগ চাই !” ব্যানার নিয়ে মিছিলে অংশ নিয়েছে সে। তাই তার মতো সচেতন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করতে পারেনা বলে দাবী করেন একাধিক সহপাঠী। এ বিষয়ে ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, আমিও শুনেছি সে মিছিলের অগ্রভাগে ছিলো। তার মোবাইল সেটটি এখনো হাতে পাইনি। যে কক্ষে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে গিয়ে তদন্ত করার পর বলতে পারবো আসলে কি ঘটেছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এখানে রীতিমতো সপ্তাহে দুবার আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাউন্সিলিং করা হয়। মানসিক সমস্যা শেয়ার করার জন্য চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারপরও কেন এ ধরনের আত্মহত্যা বাড়ছে, আমি বুঝিনা। শিক্ষার্থী শেফা প্রেম ঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছে বলে নিশ্চিত করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, যে ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো, সেও এই মুহূর্তে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগেও ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তারা হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বৃষ্টি সরকার, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শাহরিন রিভানা ও গণিতের সুপ্রিয়া দাস। একই সময়ের মধ্যে ১১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে দুজন, শের-ই-বাংলা হলে তিন জন, শেখ হাসিনা হলে একজন, মেসে চার জন এবং নিজ বাসায় এক ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি রাতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৮ম ব্যাচের বৃষ্টি সরকার মেসে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *