শিরোনাম

‘আমার ময়নার রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন হইছে’

Views: 65

চন্দ্রদ্বীপ নিউজ :: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল নিয়ে গণভবনে যাওয়ার পথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বগুড়ার নন্দীগ্রামের ভুস্কুর গ্রামের সোহেল রানা (৩০)। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারটি।

রোববার (১৮ আগস্ট) নিহত সোহেল রানার বাড়িতে গেলে তার ভাই সিহাব উদ্দিন জানান, ঢাকায় একটি ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সোহেল। গ্রামের বাড়িতে বাবা-মাসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চলতো সোহেল রানার উপার্জনে।

সোহেল রানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা মাবিয়া বেগম ছেলের জন্য বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। লোকজন দেখলে আহজারি করছেন। তিনি বলেন, বাড়ির ভিটা ছাড়া কোন জমি নাই আমাদের। স্বামী অসুস্থ, বড় ছেলে বেকার। এতগুলো মানুষের খরচ বহন করতো সোহেল। সেই ছেলেটাকে গুলি করে মেরে ফেললো পুলিশ? এখন আমাদের সংসার চলবে কি করে?

আমার ময়না দেশ স্বাধীন করেছে। ময়নাক পুলিশ গুলি করে মারছে। আমার ময়নার রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন হইছে। পুলিশ কেন আমার ময়নাক গুলি করলো? আমাক কেন করলো না। আমার ময়নাক ছাড়া আমি কেমনে বাঁচমো। আমার সোনা বুকের সঙ্গে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ছিলো আর ছোট একটি ব্যাগ ছিল। গুলি ব্যাগ ভেদ করে তার বুক ক্ষতবিক্ষত হইছে। আমি ময়নার এই পতাকা বুকত জড়িয়ে ধরে থাকমু। ময়না আমার দেশ স্বাধীন করছে। আমার ময়না শহীদ হইছে, এমন ভাবেই বিলাপ করছিলেন সোহেলের মা মাবিয়া বেগম।

সোহেল রানা ভুস্কুর গ্রামের ফেরদৌস রহমানের ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সংসারের অভাব অনটনের কারণে ঢাকায় চলে যায় ৮-৯ বছর আগে। দেড় বছর আগে বিয়ে করে স্ত্রীসহ বসবাস করতেন ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায়। ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে সাত মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধা জেলার ঢোলভাঙ্গা গ্রামে।

বড় ভাই সিহাব উদ্দিন বলেন, আমি গরুর ব্যবসাতে লোকসান করে বর্তমানে বেকার। আমার স্ত্রী, সন্তান, বাবা- মা’র ভরণ পোষণ চলতো ছোট ভাইয়ের পাঠানো টাকায়। কিছুদিন পর ছোট ভাই ব্যবসার জন্য আমাকে টাকা দিতে চেয়েছিল।কিন্তু তার আগেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল ভাইয়ের।

তিনি বলেন, ৩ আগস্ট (শনিবার) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছোট ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা হয়। বাজার খরচের টাকা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে ১০০০ টাকা পাঠায়। তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে বলে, এলাকার কেউ ঘরে নেই, সবাই মাঠে নেমেছে, আমি একা ঘরে থেকে কি করবো?

সিহাব উদ্দিন বলেন, পরদিন ৪ আগস্ট সোহেল রানা নিজেই কয়েকবার ফোন করে বাবা, মাসহ অন্যদের সাথে কথা বলে। সোমবার বিকেলে ফোন করতেই রিসিভ করেন অপরিচিত একজন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বলেন সোহেল রানা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। বাড়িতে এ খবর শুনে আজাহারি শুরু হয়। ঢাকায় বসবাস করা চাচাতো ভাইকে সংবাদ দিলে তিনি সোহেল রানার লাশ নিয়ে আসেন বাড়িতে। পরদিন জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

সোহেল রানার মোবাইল ফোনে বেশ কিছু ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায় ৫ আগস্ট দুপুরে সোহেল রানা হাতে লাঠি, বুকে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে বিজয় মিছিলে লোকজনকে সংগঠিত করছেন। তিনি সবাইকে গণভবনের দিকে যাওয়ার আহবান জানাচ্ছেন। হাসাপাতালের মৃত্যু সনদ অনুয়ায়ী সোমবার বিকেল পৌনে তিনটায় সোহেল রানার মৃত্যু হয়।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *