চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: ইসরায়েলের হামলার খবর প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। দুই মার্কিন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইরানের ওপর এই হামলা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। যদিও ইসরায়েল এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইরানি কর্মকর্তা বলেন, এই ঘটনাটি যে বিদেশি কোনো উৎস থেকে হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা বাইরে থেকে কোনো আক্রমণের সম্মুখীন হইনি এবং চলমান আলোচনা হামলার চেয়ে অনুপ্রবেশের দিকেই বেশি ঝুঁকছে।
এদিকে মাত্র এক ঘন্টা আগে একজন ইরানি বিশ্লেষক দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেন, ইসফাহানে বিমান প্রতিরক্ষা দিয়ে যে মিনি ড্রোনগুলোকে গুলি করা হয়েছিল সেগুলো ইরানের ভেতর থেকেই ওড়ানো হয়েছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, ইরানের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র বা স্থাপনাগুলোতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে জোর দিয়ে বলেছেন যে, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সামরিক সংঘাতের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয় এবং তিনি সবাইকে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’। ইসরায়েলে হামলার ঘটনাকে বেশ ছোট করেই দেখাতে চাইছে ইরান। যেন এর বিশেষ তাৎপর্য নেই। তারা বলছে, কোনো হামলা হয়নি। ক্ষুদ্রাকৃতি ড্রোনের রম্য ছবি প্রচার করছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, ওই অঞ্চলের ভালোর জন্য ইরান এবং ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ইতি টানা উচিত। এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণের শুরুটা হয় দামেস্কে ইরানি কূটনৈতিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার মধ্য দিয়ে।
এমনকি এই পর্যায়ে এসেও যদি ঘটনাপ্রবাহ থেমে যায় তারপরেও কিন্তু নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েই গেল। ইরান সরাসরি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে যার জবাবে ইসরায়েলও হামলা চালালো। এমন ঘটনা আগে দেখা যায়নি।
ওই অঞ্চলে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতে দুই দেশের অভ্যন্তরে সরাসরি হামলা না চালানোটাই যেন রুলস অব দ্য গেম(খেলার নিয়ম) ছিল এতদিন। ফলে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের ছদ্মবেশী সেই ছায়া যুদ্ধ এখন প্রকাশ্যে চলে এলো।
এদিকে ইরানে হামলা চালানোর বিষয়ে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এমন কয়েকজন কর্মকর্তা মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইসরায়েল তাদের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে। তবে ওয়াশিংটন এই হামলার বিষয়টিকে সমর্থন করেনি।
গত শনিবার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তেহরানের ওই হামলার জবাব দেওয়া হবে এমনটা আগেই স্পষ্ট করেছিল তেল আবিব। পুরো সপ্তাহজুড়েই ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন দেশটির সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছিল যেন ইরানি হামলার জবাবে বড় ধরনের পাল্টা হামলা চালানো না হয়।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক এবিসি নিউজ এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, ইরানের একটি স্থানে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের ইসফাহান বিমানবন্দরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে কী কারণে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
তবে ইরানের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইবারস্পেস’-এর পক্ষ থেকে ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে সংস্থাটির মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান বলেছেন, ইসফাহান বা দেশের অন্য কোনো জায়গায় সীমান্তের বাইরে থেকে কোনো হামলা হয়নি। তিনি বলেন, ইসরায়েল কোয়াডকপ্টার (ড্রোন) পাঠানোর ব্যর্থ ও বিব্রতকর একটি প্রয়াস চালিয়েছে এবং সেসব ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমও একই ধরনের রিপোর্ট করেছে। তারা জানিয়েছে, দেশের ভেতরের একাধিক অঞ্চলে ডিফেন্স সিস্টেম কার্যকর করা হলেও কোনো সংঘাত বা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়নি।