শিরোনাম

ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর বড় ধরনের হামলা, নিহত ১২

Views: 27

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক : ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে রকেট হামলায় ১২ শিশু-কিশোর নিহত হয়েছে। তারা সবাই আরবিভাষী ‘দ্রুজ’ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সদস্য। ফুটবল খেলার সময় গোলানের মাজদাল শামস শহরে শনিবার এ হামলা হয়। এর জন্য ইসরায়েলি বিমানবাহিনী লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছে। তবে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। বিবিসির খবর।

রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, হিজবুল্লাহর হামলার পর লেবাননে গোষ্ঠীটির সাতটি লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। তবে এসব হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

এই পাল্টাপাল্টি হামলার মাধ্যমে দুই পক্ষ সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য গত অক্টোবরে ‘গাজা যুদ্ধ’ শুরুর পর থেকেই হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। ইসরায়েলে হামাসের ওই হামলার পর হিজবুল্লাহর এই আঘাতটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গোলানে রকেট হামলার পর ফুটবল মাঠে আতঙ্কিত মানুষ ছোটাছুটি করছে। হতাহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। এ এলাকায় দ্রুজ জাতিগোষ্ঠীর ২ হাজার ৫০০ সদস্য বাস করে।

হামলার পর রোববার যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে তড়িঘড়ি দেশে ফেরেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, হিজবুল্লাহকে এজন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।

আইডিএফ মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারির অভিযোগ, হিজবুল্লাহ হামলায় ফালাক-১ রকেট ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইরানের তৈরি। দ্রুজ সম্প্রদায়ের নেতারা হামলাটিকে ‘ভয়াবহ গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, লেবাননে ইসরায়েল ফের হামলা চালালে পরিণতি খারাপ হবে।

এদিকে গোলানে হামলার সঙ্গে হিজবুল্লাহ জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি বলেন, গোলানে আঘাত হানা প্রতিটি রকেটই হিজবুল্লাহর। আমরা ইসরায়েলি নাগরিকদের অধিকার রক্ষার পক্ষে। গাজায় যুদ্ধবিরতিই শুধু ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে শান্তি ফেরাতে পারে। আমরা সংঘাত বাড়াতে চাই না। এ ব্যাপারে ব্লিংকেন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

তবে গোলানে হিজবুল্লাহ হামলা চালিয়েছে, তা বিশ্বাস করেন না লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বোহাবিব। তিনি বিবিসিকে বলেন, তিনি মনে করেন না হিজবুল্লাহ ওই হামলা চালিয়েছে। বেসামরিক নাগরিকের ওপর যে কোনো হামলা নিন্দনীয়। তিনি বলেন, এ হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত। সীমান্তে শান্তি ফেরাতে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহকে সংযমী হতে হবে। প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব থেকে হিজবুল্লাহর সরে আসা উচিত।

গোলানে হামলার ঘটনায় লেবানন সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। দেশটির আশঙ্কা, এ যুদ্ধ এখন সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেবে, যার বিপর্যয়কর পরিণতি হতে পারে। গাজার সঙ্গে ইসরায়েল যা করছে, বৈরুতের সঙ্গেও একই আচরণ করতে পারে বলে শঙ্কা দেশটির। আগে থেকেই লেবানন সরকার সীমান্তে হিজবুল্লাহর হামলাকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে। ইসরায়েল এখন কী পদক্ষেপ নেবে, সেদিকেই দেশটির নজর। লেবাননের কর্মকর্তারা মনে করেন, এত দিন হিজবুল্লাহর সঙ্গে অঘোষিত যুদ্ধ চালাচ্ছিল ইসরায়েল। গোলানে হামলার পর এবার যুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেতে পারে।

জানা যায়, দ্রুজ জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ সদস্য উত্তর ইসরায়েল, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ায় বাস করেন। এ জনগোষ্ঠীর লোকেরা ইসরায়েলে পূর্ণ নাগরিকত্ব পায়। তারা ইসরায়েলের জনসংখ্যার ১.৫ শতাংশ। ১৯৮১ সালের দিকে দ্রুজদের ইসরায়েলি নাগরিকত্ব দেওয়া শুরু হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতেও এ জাতিগোষ্ঠীর অনেক সদস্য রয়েছেন।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *