শিরোনাম

ইসরায়েল? গাজায় যুদ্ধের ৬ মাস হামাস নির্মূলে কতটা সফল ইসরায়েল?

Views: 28

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক : গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর হামলার পর ইসরায়েলের ১২০০ মানুষকে হত্যা এবং একশ’র বেশি নাগরিককে জিম্মি করে হামাস। এর জবাবে হামাসকে নিঃশেষ করার প্রতিশ্রুতি দেয় ইসরায়েল, যাতে কোনো ধরনের হুমকি তৈরি করতে না পারে।

এসব কিছু ছাপিয়ে উপত্যকায় ক্রমাগত বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। সব দিক থেকেই চাপের মুখে রয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। তবে এটা পরিষ্কার যে, হামাসকে নির্মূলে সফল হয়নি ইসরায়েল। কীভাবে যুদ্ধ শেষ হবে বা পরবর্তী সময়ে কী করতে হবে– তা নিয়েও ইসরায়েলের কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা নেই।

গতকাল শনিবার এক দিনে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬৫ জন। ছয় মাসে মোট ৩৩ হাজার ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। এ অবস্থায় একটি যুদ্ধবিরতির দিকে রয়েছে পুরো বিশ্ব।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) বিবৃতিতে দাবি করা হয়, হাজারো হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। গাজার তলদেশে সুড়ঙ্গের বিশাল নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা হয়েছে, যা হামাস হামলা চালাতে ব্যবহার করতো। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৩ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। এই সংখ্যাটি কীভাবে গণনা করেছে তা জানানো হয়নি। যদিও ইসরায়েল প্রতিটা হামাস নেতাকে হত্যার পর তাদের পরিচয় প্রকাশ করে।

গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১১৩ জনের পরিচয় প্রকাশ করা হয়। তাদের অধিকাংশেই যুদ্ধের প্রথম তিন মাসে নিহত হয়। এ বছরের ২৬ মার্চ হামাসের সামরিক শাখার ডেপুটি কমান্ডার মারওয়ান ইসাকে হত্যার কথা জানায় আইডিএফ। তিনি মোস্ট ওয়ান্টেডদের মধ্যে একজন ছিলেন। তবে হামাস এ তথ্য নিশ্চিত করেনি।

অপর দিকে ইসরায়েলের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২৫৩ জনকে গাজায় জিম্মি করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ১০৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সামরিক অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৩ জনকে। ১২ জিম্মির মরদেহ  উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন নিজজেদের ভুল অপারেশনে হত্যা করা হয়। বাকি ১২৯ জন জিম্মির মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছে বলে ধারণা করছে ইসরায়েল। তবে হামাস বলছে, মৃত জিম্মির সংখ্যা আরও বেশি। আর হামলার ফলে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ছাড়া আর কোনো কিছু অর্জন করেনি ইসরায়েল।

গতকাল শনিবার সিএনএনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, গাজায় ভয়ানক মানবিক সংকট সত্ত্বেও অব্যাহতভাবে হামাসকে তাড়া করা বৈশ্বিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করে দিয়েছে। ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার সব দিক থেকেই চাপের মুখে রয়েছে। বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল যা করেছে, তা গণহত্যা বলে গণ্য হতে পারে। ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোও এখন নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা করছে। ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ না করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ওপর চাপ বাড়ছে।

এদিকে হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে আজ রোববার মিসরের কায়রোতে তারা একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলার ছয় মাসে ১৯৬ জন ত্রাণকর্মী নিহত হন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইসরায়েলের কাছ জানতে চান, তাদের কেন হত্যা করা হয়েছে। অবরুদ্ধ উপত্যকার পরিস্থিতি একেবারেই খারাপ। তাঁর প্রত্যাশা, ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেবে না। গত সপ্তাহে তিনটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে বিদেশি সাত কর্মীকে হত্যা করে ইসরায়েল। নিহতদের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ, একজন পোলিস, একজন অস্ট্রেলীয়, একজন মার্কিনি ও একজন ফিলিস্তিনি রয়েছেন। এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় তোলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফোন করে নেতানিয়াহুকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেন।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতি ঘণ্টায় মারা যাচ্ছে প্রায় চার শিশু। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ হাজার ৩৫০ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। যা মোট নিহতের প্রায় ৪৪ ভাগ।

গত শুক্রবার ফিলিস্তিনের বার্ষিক শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে ফিলিস্তিন কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রতি ঘণ্টায় প্রায় চার শিশু মারা যায়। নিখোঁজদের মোট সংখ্যার অন্তত ৭০ ভাগ নারী এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ৭ হাজার। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ১১৭ জন শিশু নিহত এবং ৭২৪ জন আহত হয়েছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *