পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ঢাকার উত্তরায় এলোপাতাড়ি গুলিতে মারা গেছেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো, সাগর গাজী (২০)। গত সোমবার শেষ বেলায় উত্তরার জসিম উদ্দিন ফ্লাইওভার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের পূর্বপাড় ডাকুয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাগর। বাবা পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ও মা সাহিদা বেগম গৃহিণী। উপজেলার উলানিয়া স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০২৩ সালে একই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একটি বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারে নাই। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সেই বিষয়ে অংশও নেন সাগর। মাত্র ২ মাস আগে উত্তরা এলাকায় সিটি অনলাইন কোম্পানিতে চাকরিতে যোগদান করে। সাগর উলানিয়া স্কুল এন্ড কলেজ ছাত্রদল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার আনাচে-কানাচে উৎসুক জনতা রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় সাগরসহ তার সহকর্মীরা উত্তরার জসীম উদ্দিন ফ্লাইওভার এলাকায় বের হয়। উৎসুক জনতা র্যাব-১ দপ্তরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরে র্যাবও এলোপাতাড়ি গুলি করে। ছত্রভঙ্গ জনতা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকে। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলি সাগরের মাথায় এসে পড়ে। স্থানীয়রা তাকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি। সাগরের সহকর্মীরা তার মুঠোফোনে কল করলে স্থানীয়রা তার মৃত্যুর খবর জানান। পরে তার আত্মীয় ও সহকর্মীরা হাসপাতাল থেকে লাশ শনাক্ত করে। লাশ এম্বুলেন্সযোগে তার গ্রামের বাড়ি পূর্বপাড় ডাকুয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে মঙ্গলবার ভোর রাতে এসে পৌঁছায়। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় উলানিয়া বন্দর মাসজিদুল আয়শা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সাগরকে।
সরজমিন দেখা যায়, স্বজনের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা-মা।
বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। খুব কষ্ট করে ছেলেদের লেখাপড়া চালাই। আন্দোলনের শুরু থেকে সাগর সক্রিয় ছিল। পরীক্ষা শেষেই চলে যায় ঢাকায়। ফিরে আসে লাশ হয়ে।
ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করছে মা সাহিদা বেগম। তিনি জানান, ‘কষ্ট কইরা লেহাপড়া করাইছি, মানুষ করছি। আমার পুতকে মারছে ক্যান। আমার পুতের দোষটা কী।’