শিরোনাম

এমটিএফই কেলেঙ্কারি : নজরদারিতে সিইওরা, তদন্তে ব্যবহার হচ্ছে এআই-রোবট

Views: 156

চন্দ্রদীপ নিউজ : কেউ বিক্রি করেছেন শখের মোটরসাইকেল, কেউ নিয়েছেন ব্যাংক থেকে ঋণ। কেউ আবার রেখেছেন জমি বন্ধক, নয়তো করেছেন ধারদেনা কিংবা গরু-ছাগল বিক্রি। সবাই হতে চেয়েছেন রাতারাতি ধনী। এই প্রলোভন দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ ইনকরপোরেটেড (এমটিএফই)। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন এমটিএফই-র সিইওরা। মামলাও হয়েছে কয়েকটি। তদন্তে সহায়তা নেওয়া হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটের।

মূলত এটা মোবাইলভিত্তিক অ্যাপস। এই অ্যাপস ডাউনলোড করে যে কেউ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারতেন। অ্যাকাউন্ট খোলার পরেই মূলত লেনদেন শুরু হতো। গত ১৭ আগস্ট হঠাৎ এমটিএফই-র অ্যাপ বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ মানুষের বিনিয়োগ করা অর্থ উধাও হয়ে যায়। উল্টো বেড়েছে তাদের ঋণের বোঝা।

প্রথমদিকে এমটিএফই অ্যাপে যুক্ত প্রত্যেকেই ৬১, ২০১, ৫০১, ৯০১ ও ২ হাজার ডলার ডিপোজিট করেন। বেশি টাকা আয় করতে কেউ কেউ পাঁচ হাজার ডলারের বেশিও বিনিয়োগ করেছিলেন। এমটিএফইতে করা বিনিয়োগ হারিয়ে অনেকে ফতুর হলেও পুলিশের শরণাপন্ন হচ্ছেন না কেউ। কারণ ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। তবে এর মধ্যে সাহস করে কেউ কেউ থানায় অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত এ অ্যাপের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। টাকা কীভাবে পাচার হলো এবং কারাইবা এর সঙ্গে জড়িত এসব খুঁজতে ব্যস্ত সময় পার করছে পুলিশের সাইবার ইউনিটগুলো।

পুলিশ বলছে, এমটিএফই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজন হতো মোবাইল নম্বর, বিকাশ অথবা নগদ নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর। ভার্চুয়ালি ক্রিপ্টো কারেন্সি ও ডলার কেনাবেচা করা হলেও লভ্যাংশ দেওয়া হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। মোবাইল নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে যারা অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে। এজন্য পুলিশের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কাজে লাগানো হচ্ছে।

যেভাবে কাজ করবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স:

তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইনে হরহামেশাই যে কেউ অ্যাপ ডাউনলোড করে অনেক কিছু করছে। এমটিএফই অ্যাপে যারা অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তাদের ফুটপ্রিন্ট রয়ে গেছে। অ্যাপে যারা মোবাইল নম্বর, মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়েছেন তাদের খুব সহজেই খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি থানায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ চলছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সিআইডির ফরেনসিকও এমটিএফই অ্যাপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে।

প্রতারণার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে করা কয়েকটি মামলা বিশ্লেষণ করে এবং মানুষের কাছ থেকে আসা তথ্য থেকে এমনটিই ধারণা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। এ কারণে এই সিইওদের খোঁজে মাঠে নেমেছে সিআইডি।

এমটিএফই নিয়ে ঢাকায় মামলা: খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি সিআইডি ফাঁদে পড়া গ্রাহকদের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে বিবৃতি দেয়। এরপর ২৮ আগস্ট রাতে মারুফ রহমান ফাহিম নামে এক ভুক্তভোগী মামলা করেন। রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে তিনি প্রধান আসামি করেন মাসুদ আল ইসলামকে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরের সাতপুরায়।

বলছেন তদন্ত কর্মকর্তারা

ডিএমপি, বগুড়া, কুমিল্লা ও কুষ্টিয়ায় করা কয়েকটি মামলা বিশ্লেষণ করে সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, দেড় থেকে দুই কোটি টাকা যারা বিনিয়োগ করিয়েছিলেন, এমন ব্যক্তিদের সিইও ঘোষণা করেছিল এমটিএফই। বিনিয়োগকারীদের টাকার ওপর মোটা অঙ্কের কমিশনও ছিল তাদের জন্য। এই সিইওদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও আছেন। তাদের অনেককে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে নজরদারিতে থাকা কয়েকজনের দাবি, তারা নিজেরাও লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দুবাইভিত্তিক এমটিএফইর প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক কুমিল্লার মাসুদ আল ইসলাম। তিনিও দুবাইয়ে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলেন। পরে নিজেই দেশে ব্যবসা করতে এ অ্যাপ চালু করেন। মাসুদকে দেশে ফেরানো না গেলে এমটিএফইতে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত আনা সম্ভব নয়। তাই ইন্টারপোলের সহায়তায় তাকে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে। অবশ্য টাকা পাচার করে বিদেশে চলে যাওয়া কোনো অভিযুক্তকেই এখনো ফেরাতে পারেনি পুলিশ।

এ বিষয়ে কথা হয় সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহার সঙ্গে। তিনি বলেন, এমটিএফইতে অ্যাকাউন্ট খোলার পর বিন্যান্স নামে যে অ্যাপস ছিল সেটিতে অফিসিয়ালি সবকিছু রয়েছে। সেখানে কারা জড়িত এবং কারা কত টাকা ইনভেস্ট করেছে তাও রয়েছে। বিন্যান্স অ্যাপসের কোনো তথ্য জানতে হলে তাদের কাছে সহায়তা চাইতে হবে। অ্যাপসের তথ্যগুলো নিতে হলে মামলা রুজু করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে এই তথ্য চাওয়া যেতে পারে এবং কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে।

সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল মাসুদ বলেন, এমটিএফই নিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রথমে মামলা না করতে চাইলেও এখন দেশের কোনো না কোনো থানায় মামলা হচ্ছে। সিআইডি মামলার তদন্ত শুরু করেছে। অ্যাপে যারা অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন এবং লেনদেন করেছেন তাদের ফুটপ্রিন্ট অনলাইনে রয়েছে। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও রোবট ব্যবহার করেও কাজ চলমান।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *