শিরোনাম

কর আরোপে ক্ষুব্ধ বরিশালের সাধারণ মানুষ

Views: 6

সম্প্রতি, সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর নতুন করে কর আরোপ করেছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জন্য জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। সরকার দাবি করছে, বাজার এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু বরিশালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আসলে পরিস্থিতি ভিন্ন। শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কমলেও, অন্যান্য পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। নতুন শুল্ক বৃদ্ধির কারণে জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে, সরেজমিনে বরিশালের বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। শীতকালীন সবজি যেমন ফুলকপি ও শালগমের দাম কমলেও, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো আকাশচুম্বী। মুদি দোকানগুলোতে চিনি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা, এবং ২৮ কেজি চালের বস্তা ১,৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বরিশাল নগরীর পলাশপুর এলাকার গৃহিণী হাসিনা আক্তার জানান, “বাজার করতে গেলে প্রতিদিন দুশো-তিনশো টাকা লাগে। আলু, তেল, ডালের দাম সব আকাশচুম্বী। তার সঙ্গে মোবাইল আর গ্যাসের দাম বাড়লে কীভাবে ঘর চালাব? সরকার কি আমাদের নিঃশেষ করে দিতে চায়?”

শ্রমিক আমিনুল হক বলেন, “চিনি ১৭০, রসুন ২২০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে কি আর সংসার চালানো সম্ভব?”

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মোবাইল রিচার্জ, কলরেট, এবং ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে মোবাইল ফোনে ১০০ টাকার রিচার্জে গ্রাহককে ৫৬ টাকার বেশি কর দিতে হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি হলেও, সাধারণ জনগণের পক্ষে এই বাড়তি খরচ বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বরিশাল নগরীর বিবি পুকুর পাড়ের মোবাইল রিচার্জ দোকানের মালিক রাসেল মিয়া জানান, “এখন প্রতিদিন রিচার্জ কম হচ্ছে। মানুষ তো মোবাইল ব্যবহার কমাচ্ছে। শুল্ক বাড়ানোর পর গ্রাহক কমে যাবে।”

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, “জনগণ এখন সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করছিল। এই মুহূর্তে নতুন করে কর আরোপ জনমানসের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ার প্রমাণ।”

বরিশালের পোর্ট রোডের মুদি দোকানি মনিরুল ইসলাম বলেন, “চিনি, ডাল, চাল এসব পণ্য কিনে আনতে গিয়ে দাম বেড়েই চলছে। এখন এই নতুন শুল্ক যোগ হয়ে গেলে দাম আরও বেড়ে যাবে। খুচরা বিক্রিতে গ্রাহকরা তো বেশি দামে নিতে চান না।”

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। বিএনপির বরিশাল মহানগর আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, “তিনি এখনও এই বিষয়ে জানেন না।” অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মহানগর আমীর জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর জানান, “বিষয়টি বিস্তারিত জানার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।”

এমন পরিস্থিতি দেশে এক সংকটজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। সরকার যেখানে সমাধান খুঁজতে চেয়েছে, সেখানে নতুন কর আরোপ জনগণের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শিক্ষার্থী পর্যন্ত সবাই এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, কিন্তু রাজনীতিতে বিরাজ করছে এক অস্বাভাবিক নীরবতা।

মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *