পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া পৌরসভায় নাগরিক সচেতনতার অভাব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে জলাধারগুলো ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে, এবং নাগরিকদের জন্য পরিবেশ হয়ে উঠছে বিপজ্জনক। জলাধারের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের আইনগুলো উপেক্ষা করে চলছে পুকুর ভরাট এবং বিক্রি করার মহোৎসব, যার কারণে একদিকে পানির সংকট তো সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে বাড়ছে অগ্নিনির্বাপণ ঝুঁকির আশঙ্কাও।
গত দেড় দশকে প্রায় চার হাজার পুকুর ভরাট করা হয়েছে কলাপাড়ায়, যার কারণে গোসল, রান্না এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত পানির উৎস কমে গেছে। বর্তমানে, পানি সরবরাহ একদিন বন্ধ থাকলেই কলাপাড়ার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আগে যে পুকুরগুলো পানি সরবরাহের কাজ করত, সেগুলো ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে, যার ফলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
পুকুর ভরাটের ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে এবং এতে করে ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। পুকুর ভরাট এবং জলাধার সংরক্ষণের বিষয়টি আরো জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ সরকারি আইনের প্রয়োগ নেই। পুকুর ভরাটের কারণে ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহার কমে গেছে এবং মানুষের উপর চাপ পড়ছে গভীর নলকূপের ওপরে, যার ফলে পানি স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
কলাপাড়া পৌরসভার খালগুলো এবং পুকুরের অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে। শহরের মধ্যে “চিংগরিয়া খাল” নামক খালটি শহরের একমাত্র জলাধার হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতার কারণে এটি এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এছাড়া, পুকুর ভরাট ও আবর্জনা ফেলার কারণে পরিবেশ আরো দূষিত হয়ে উঠছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কলাপাড়া হাসনপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জেএইচ খান লেলিন জানিয়েছেন, পুকুর ভরাটের কারণে পানির সংকট রয়েছে এবং এর ফলে ডায়রিয়া এবং পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. ইলিয়াস হোসেন বলেছেন, পৌর শহরে পুকুর ও খাল ভরাট ও ময়লা আবর্জনা ফেলার বিরুদ্ধে যৌথভাবে কাজ করার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত।
কলাপাড়া পৌরসভার প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, পৌরসভায় খাল ও জলাধারগুলো সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।