শিরোনাম

কলাপাড়ার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে তিন লক্ষাধিক মানুষ

Views: 70

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলের তিন লক্ষাধিক মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করা, বছরের পর বছর বৃষ্টির পানিতে বেড়িবাঁধের উচ্চতা কমতে থাকলেও মাটি দিয়ে এর উচ্চতা বৃদ্ধি না করাই এই আতঙ্কের অন্যতম কারণ।

কলাপাড়া উপজেলার আয়তন ৪৯২.১০ বর্গ কি.মি। এখানে ১২টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভায় ২৪৪টি গ্রাম রয়েছে। উপজেলা ২২টি স্পটে ৯.১৯ কি. মি বেড়িবাঁধ বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও প্রতি অমাবস্যা আর পূর্ণিমার সময় এলাকার মানুষ জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় থাকে আতঙ্কিত।

জানা যায়, গত এক দশকে মে মাসে আটটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। ৪৭/৪ পোল্ডারের মিঠাগঞ্জ বেড়িবাঁধ ইতিমধ্যে বাঁধের রিভার সাইডের মূল বাঁধসহ জিওব্যাগ ধসে আন্ধারমানিক নদীতে পড়ে গেছে।
ভাঙন শুরু হয়েছে বাঁধের কান্ট্রি সাইডেও। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ফাঁটল। এ কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

৪৬ পোল্ডারের নীলগঞ্জ ইউনিয়নে গইয়াতলা গ্রামের ভাঙা বাঁধ সংলগ্ন ছয়টি গ্রামের মানুষ রয়েছে আতঙ্কে। বাঁধসহ স্লুইসগেট ভেঙে পড়ার পর এবার বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ার চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে এলাকার মানুষ। সোনাতলা নদীর ঢেউয়ের তোরে গইয়াতলা বেড়িবাঁধের রিভার সাইডের বাঁধ ভেঙে পড়েছে। বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ফাটল।

এদিকে, ৪৭ পোল্ডারের মহিপুর ইউনিয়নে সিডরের পর থেকে নিজামপুর ৫ গ্রামের মানুষ ১০ বছর ধরে জমিতে কোনো চাষ করতে পারেনি। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এখানের রিং বেড়িবাঁধ করে দেয়। এখন আবার নতুন করে আতঙ্কে ভুগছে। হুমকিতে পড়ছে উপজেলা নিজামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিনই ভাঙছে নতুন করে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। সাগর ও নদীর প্রতিটি জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বসতঘর, আবাদি জমি ও মাথাগোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু। নিঃস্ব হতে হতে এই গ্রামের মানুষের শেষ সম্বল এখন শুধুই বেঁচে থাকার আকুতি। এভাবে পাউবোর পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সীপাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলী, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড়কলবাড়ি, খ্রিস্টান পাড়ার বেড়িবাঁধ।

আরো পড়ুন : পূর্ব বিরোধের জেরে বাউফলে বৃদ্ধকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ

এলাকাবাসীর দাবি, ত্রাণ চাই না শুধু বাঁধ চাই। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিশ্চিহ্ন আন্দারমানিক নদী তীরবর্তী এলাকার হাজারো পরিবারের দিন কাটছে চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যদিয়ে। ভয়াবহ ভাঙন ও তীর রক্ষাবাঁধ ধসে যাওয়ায় ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় তাদের মধ্যে এ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পুরো বাঁধ ভেঙে গেলে অরক্ষিত হয়ে পড়বে গোটা কলাপাড়া উপজেলা।

স্থানীয়রা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময়মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ সম্ভব। তবে বর্ষার আগ মুহূর্তে যখন নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে বাঁধ কানায় কানায় পূর্ণ হয়, পাউবো কর্তৃপক্ষ সে সময় এসে মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে খরচ বাড়ে, অন্যদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নিম্নমানের। প্রতি বছরের মে মাস এলেই পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের তোড়জোড় শুরু করে। কী কারণে তা কেউ বলতে পারে না। অথচ শীত মৌসুমে কাজ করার অনেক সুবিধা। বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টির জন্য পাউবোর লোকজন অসময়ে এসে কাজ ধরেন।

মহিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ফজলু গাজী জানান, এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষই মৎসজীবী। আবার কেউ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুধু অমাবস্যা-পূর্ণিমাই নয়, জোয়ার ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। পূর্বের বেড়িবাঁধ নেই।

পাউবোর উপ-বিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, পাউবোর পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সীপাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলী, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড়কলবাড়ী, খ্রিস্টানপাড়া, চরান্ডা, চর মোন্তাজ, চালিতবুনিয়া বড় বাইশদিয়া বেড়িবাঁধের ২২টি স্পটে ৯.১৯ কি. মি. বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকতাদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। তারা বলছে বেড়িবাঁধগুলো পর্যায় ক্রমে মেরামত করা হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *