বরিশাল অফিস :: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বেলকা ইউনিয়নের বেলকা খেয়াঘাট এলাকা তিস্তার শাখা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি কাঠের সেতুর অংশ দেবে গেছে। সেতুটির মাঝখানের চারটি সিসি পিলার দেবে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে দুটি ইউনিয়নের মানুষ।
সম্প্রতি নির্মাণাধীন সেতুর মাঝখানের চারটি সিসি পিলার দেবে গেছে এমন খবরে জেলাজুড়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নির্মাণাধীন একটি সেতু নির্মাণের পূর্বেই কীভাবে দেবে যায় এমন প্রশ্ন এখন সচেতন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে লোকজন চলাচল করছেন। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। শিশুরা সেতু থেকে লাফিয়ে নদীতে পড়ে গোসল করছে। নদীতে স্রোত বাড়লেই সেতুটি আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই মাঝখানের অংশ দেবে গেছে।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট থেকে নৌকাযোগে নদী পারাপার হতেন। দুই পাশের ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা। স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেলকা ঘাট এলাকায় একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা। ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে এই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ।
এ পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সিসি পিলারের ওপর দুই পাশে ঢালাই দেওয়া হয়। সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্ল্যাবের পরিবর্তে কাঠ দেওয়া হয়েছে। সেতুর দুই পাশে নিরাপত্তামূলক প্রাচীর দেওয়া হয়নি। প্রায় চার ফুট উচ্চতার পিলার দেওয়া আছে। এ অবস্থায় সেতুর ওপর দিয়ে স্থানীয় লোকজন যাতায়াত শুরু করেন। শুধু তাই না সাইকেল ও রিকশাও সেতুটি দিয়ে পারাপার হতে থাকে।
বেলকা এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, আগে এখানে কোনো সেতু ছিল না। নৌকা দিয়ে পার হতে হতো। এতে সাধারণের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এবার একটি কাঠের সেতু নির্মিত হচ্ছে দেখে খুশি হয়েছিলাম। এখন দেখছি, নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই তা দেবে পড়েছে।
ভেল্কা ইউনিয়নের অন্য এক বাসিন্দা শাহেদ মিয়া বলেন, দুটি ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই সেতু। নির্মাণ হওয়ার পূর্বে চারটি পিলার দেবে যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত এই ব্রিজটি আসলে কতদিন দাঁড়িয়ে থাকবে! আমি এলাকাবাসীর পক্ষে ঠিকাদার এবং উপজেলা প্রকৌশলীসহ এই ব্রিজের সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ছানা মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। তাই কাজটি শেষ করতে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি, তার আগেই সেতুটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেল।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মান্নাফ বলেন, সেতু দেবে যাওয়ার কথা শুনেছি। পিলার দেবে যাওয়ায় চলাচল এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, লোকমুখে বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।