শিরোনাম

কী ঘটবে লালমোহন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে?

বরিশাল অফিস :: ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া তৃতীয় ধাপের ভোলার লালমোহন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল (৯জুন)। নির্বাচনকে ঘিরে পৌরশহর থেকে শুরু করে গ্রামের ভোটারদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নতুন করে ‘কারা বসবেন লালমোহন উপজেলা পরিষদে, নির্বাচনে ঘটবে কী’ এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে। অনেক প্রার্থী আবার কাজে লাগাতে চান নিজ নিজ এলাকার ভোট ব্যাংক।

বর্তমানে লালমোহন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। তিনি এরআগেও দুই বার টানা লালমোহন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে জয়ী হন।

অন্যদিকে শালিক প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ভোলার দুই এমপির খুবই কাছের আত্মীয় মো. আকতার হোসেন। তিনি লালমোহন উপজেলার কালমা ইউপির একাধিকবারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যার ফলে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন তিনি ও তার সমর্থকরা। আকতার হোসেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এছাড়া দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন লালমোহন উপজেলা বিএনপির (একাংশের) সাবেক সদস্য সচিব মো. আকতারুজ্জামান টিটব। যদিও এ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন। আকতারুজ্জামান টিটবও উপজেলার চরভূতা ইউপির একাধিকবারের চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি ওই ইউপির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে অন্যান্য প্রার্থীদের কাছে এই আকতারুজ্জামান টিটব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কারণ লালমোহন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি একাই বিএনপিপন্থি চেয়ারম্যান প্রার্থী।

অপরদিকে হেলিকপ্টার প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হোসেন হাওলাদার। তিনিও ছিলেন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

এই নির্বাচনে একেবারেই নতুন চেয়ারম্যান প্রার্থী লায়ন আবুল হাসানাত হাসনাইন। তিনি লড়ছেন কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে। তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জয়ী হতে চান তিনি। আবুল হাসানাত হাসনাইন অনলাইন লিগ্যাল সার্ভিস বিডির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে রয়েছেন। চিংড়ি মাছ প্রতীক নিয়ে মাঠে লড়ছেন একেএম বাহারুল ইসলাম। তিনি লালমোহন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান একেএম নজরুল ইসলামের ভাই। এছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নজরুল ইসলাম লাভু। তিনি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দুইবারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে চমক আছে ভাইস চেয়ারম্যান পদে। এই পদে লড়ছেন মোট চারজন প্রার্থী। যাদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আবুল হাসান রিমন। তিনি এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চশমা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া নতুন করে এবার তালা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন। বই প্রতীক নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আ.ন.ম. শাহ্ জামাল দুলাল এবং টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন মো. জাকির হোসেন। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী থাকলেও সাধারণ মানুষজন মনে করছেন, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে চশমা প্রতীকের প্রার্থী আবুল হাসান রিমন ও তালা প্রতীকের প্রার্থী মো. জাকির হোসেনের মধ্যে।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুইজন। এদের মধ্যে হাঁস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. মাসুমা বেগম। এছাড়াও এই পদে কলস প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন বাংলাদেশ আওয়ামী মহিলা লীগের উপজেলার নেত্রী রোকেয়া বেগম।

এদিকে উপজেলার ভোটাররা বলছেন, এলাকার উন্নয়নে যারা কাজ করবে এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবেন তাদেরকেই নির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা লালমোহনবাসীকে একটি নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেবো।
প্রসঙ্গত, একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত লালমোহন উপজেলা। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৭জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৩জন এবং পুরুষ ভোটার ১লাখ ৩৫ হাজার ৩৭১জন। এছাড়া এই উপজেলায় তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৩জন। এসব ভোটাররা উপজেলার ৮৩টি কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

image_pdfimage_print