পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় গতকাল (১৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব ও রাস মেলা। ৩ দিনব্যাপী এই উৎসব ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার ভোরে তীর্থযাত্রা শুরু হবে, এবং শনিবার ভোরে পূর্ণ স্নান অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে শেষ হবে এবারের রাস উৎসব।
কুয়াকাটায় রাস পূর্ণিমা ও রাস মেলা উপলক্ষে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং টুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিটগুলো সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মেলার জন্য নির্ধারিত স্থানে দোকান-পাট গড়ে উঠেছে এবং কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম রাস মেলায় আগত দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মেলাকে কেন্দ্র করে খেলনা গাড়ির দোকানদার রফিক উদ্দিন বলেন, “প্রতিবছর কুয়াকাটায় রাসমেলা উপলক্ষে দোকান নিয়ে আসি। এখানে হাজার হাজার মানুষ আসেন, আমরা আশা করছি এবারও ভালো মানুষের সমাগম হবে এবং আমরা ভালো বেচাকেনা করতে পারব।”
কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নীহাররঞ্জন মন্ডল বলেন, “রাস উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ কথাবাস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় রূপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালন করে থাকে। তারা বিশ্বাস করেন, বঙ্গোপসাগরে জোয়ারে স্নান করার মাধ্যমে তাদের পাপ মোচন হয়। আমরা আশা করছি, এবার উৎসব ভালোভাবে কাটবে।”
রাস মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা কুয়াকাটায় আসেন। প্রতিবছর এই সময় কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এবারের উৎসবেও স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ট্যুর গাইডরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ বলেন, “মেলায় আগত দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের জন্য হোটেল-মোটেলগুলি প্রস্তুত রয়েছে। রাস মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েক লাখ পর্যটক আসবে, এবং ব্যবসায়ীরা এতে উচ্ছ্বাসিত।”
এবার রাস মেলার জন্য কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন এবং কুয়াকাটা পৌর প্রশাসন যৌথভাবে ৩ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম জানান, “রাস মেলার জন্য আমরা ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, থাকার স্থান, নিরাপদ পানি, সিসি টিভি স্থাপনসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। সেনাবাহিনী, ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ এবং সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা আশা করি, কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই এই আয়োজন সফল হবে।”