মো:আল-আমিন, পটুয়াখালী : পর্যটন নগরী পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় স্থানীয়দের জন্য পারিবারিক কবরস্থান থাকলেও সাধারণ মানুষ ও অজ্ঞাত ব্যক্তির শেষ যাত্রার ঠিকানা সরকারি কোনো কবরস্থান নেই। পর্যটন নগরীর জমির দাম দিনকে দিন বৃদ্ধি হওয়ার কারণে আগামীতে সাধারণ মানুষ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সমাহিত করতে সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
তাই দ্রুত সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য পৃথক একটি কবরস্থান নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
কুয়াকাটার সঙ্গে সমগ্র দেশের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হওয়ার কারণে সরকারি নতুন নতুন প্রকল্প ও বেসরকারিভাবে বিনিয়োগকারী বাড়ছে।
স্থানীয় উন্নয়ন, আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন অবকাঠামো এখন গড়ে উঠছে কুয়াকাটায়। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এখানকার জমির দাম। আর পর্যটন এলাকার স্থানীয়দের জন্য পারিবারিক কবরস্থান থাকলেও সাধারণ মানুষের শেষযাত্রার ঠিকানা না থাকায় কবরস্থানের জায়গা পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে শোকাহত স্বজনদের।
স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন বলেন, ছোট সময় থেকে কুয়াকাটায় বসবাস করি। ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর আমার বাবা মারা যান। আমাদের গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামে হওয়ায় আর্থিক সংকটের কারণে বাবার দেহ বাড়ি নিতে পারিনি। কুয়াকাটায় ভাড়া বাসায় বসবাস করার কারণে নিজস্ব কবরস্থান না থাকায় বাবার লাশ দাফন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ি। পরে মানবিকতার কারণে স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি শরিফ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে বাবাকে দাফন করতে দেন।
দ্রুত সরকারি কবরস্থান নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদ্দাম বলেন, এখনো জমির দাম কম থাকায় কুয়াকাটায় ধনাঢ্য স্থানীয়দের পারিবারিক কবরস্থানে মানবিক দিক বিবেচনা করে সাধারণের কবর দেওয়া হয়। তবে যেভাবে দিন দিন জমির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে কবর দেওয়ার জায়গা নিয়ে সংকট দেখা দেবে। তাই দ্রুত সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য একটি কবরস্থান নির্মাণের দাবি জানাই।
কবর খননকারী হাফেজ সিকদার (৭০) বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থেকে পটুয়াখালীর সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় মানুষকে দাফন করি। বর্তমান সময় পর্যন্ত ৩২৫ জন মৃত্যু মানুষের দাফন কাজ সম্পন্ন করেছি। শুরুর দিকে জমির মূল্য কম থাকায় মানুষ পারিবারিক কবরস্থানে সাধারণ মানুষকে দাফন দিত। দিন দিন জমি কমে যাওয়া ও জমির মূল্য বৃদ্ধির কারণে টাকার বিনিময়েও সাধারণ মানুষকে দাফন দিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে একটি সরকারি কবরস্থান নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত। দ্রুত সময়ের মধ্যে খাস জমির বন্দোবস্ত করে সরকারি কবরস্থান নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।