শিরোনাম

কুয়াকাটাসহ কলাপাড়ায় কৃষিজমি হ্রাসে খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয়ের শঙ্কা

Views: 33

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: কলাপাড়ার পর্যটন অঞ্চল কুয়াকাটা ও ধানখালীতে প্রায় ২০ হাজার একর কৃষিজমি কৃষকদের হাতছাড়া হয়ে গেছে, যার এক-তৃতীয়াংশ বর্তমানে স্থায়ীভাবে পতিত অবস্থায় রয়েছে। পায়রা বন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নে আরও প্রায় ১০ হাজার একর জমি কৃষি থেকে বিচ্যুত হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছর প্রায় ৪২ হাজার মেট্রিক টন ধানসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানাচ্ছেন, এখানকার বেশিরভাগ জমি পতিত অবস্থায় থাকার ফলে কয়েক কোটি টাকার রবিশস্য ও শাকসবজির আবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, ধানখালী ও কুয়াকাটায় শত কোটি টাকার তরমুজের আবাদ বর্তমানে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটনের চাহিদা মেটাতে আবাসন প্রকল্পের জন্য বড় পরিমাণ কৃষিজমি অধিগ্রহণ করায় এখানকার খাদ্য উৎপাদন ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা থেকে পর্যটন পল্লী গঙ্গামতি এবং কাউয়ারচর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার একর কৃষিজমি পতিত অবস্থায় রয়েছে। একসময় যে কলাপাড়া খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল, সেই এলাকাতেই বর্তমানে খাদ্যশস্যের ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন জানান, একসময় ধান, শাকসবজি ও তরমুজের চাষ করতেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে এসব জমি অনাবাদী হয়ে পড়েছে। আবাসন প্রকল্পের জন্য প্রায় এক দশক ধরে জমিগুলি ফেলে রাখা হয়েছে, যেখানে কোনো কৃষি উৎপাদন হচ্ছে না।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষিশ্রমিকরা জানান, একসময় তারা নিজেদের উৎপাদিত ধান ও রবিশস্য এলাকার বাইরের বাজারে বিক্রি করতেন, কিন্তু বর্তমানে নিজেদের খাদ্যের জন্যও বাইরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। এছাড়া কৃষি জমির মালিকানা বদল ও আবাসন প্রকল্পের জন্য কৃষিকাজ বন্ধ থাকায় বহু কৃষিজীবি পরিবার কর্মসংস্থান হারিয়েছে।

স্থানীয় কৃষক ফরিদ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের জমিজমা ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। অনেক কৃষককে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমি ছেড়ে দিতে হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এখানকার কৃষির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।”

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, “সরকারিভাবে কলাপাড়ায় আট হাজার হেক্টর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতো। জমি হ্রাস পেলেও কৃষকরা উন্নত জাতের ধানের চাষের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।”

সরকারিভাবে কৃষিজমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায় পর্যটনের প্রভাবে এখানকার কৃষি উৎপাদন স্থায়ীভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *