শিরোনাম

কুয়াকাটা রেলপথ তৈরিতে চীনের বিনিয়োগ চায় সরকার

Views: 78

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথ এবং ঢাকার গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রো রেল চলাচলে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-২ নির্মাণ করতে চায় বাংলাদেশ। এর জন্য প্রয়োজন প্রায় এক লাখ দুই হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৭৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ হিসেবে পেতে চায় সরকার।

দুটি প্রকল্পে চীনের কাছ থেকে বিনিয়োগের প্রত্যাশা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে চীন সফরে যেতে পারেন। ওই সফরে বেশ কিছু যুগান্তকারী বাণিজ্যিক চুক্তি হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে এমআরটি লাইন-২ ছাড়াও ফরিদপুর-বরিশাল এবং বরিশাল-কুয়াকাটা চারলেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য চীনা অর্থায়ন চাওয়া হতে পারে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে প্রায় ৩০ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা বা ২.৫৭৯ বিলিয়ন ডলার (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হিসাবে) জোগানের প্রস্তাব রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে ৩০-৩৫টি ছোট আকারের সেতু এবং দুর্যোগকালীন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অর্থায়নের ঘোষণা দিতে পারে চীন। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়েও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে একটি সমঝোতাও সই হওয়ার কথা রয়েছে।

বিনিয়োগ নিয়ে চীনা মন্ত্রীর আগ্রহ
গত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানশাও। সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করছি, যা দুই দেশের সম্পর্কের মাইলফলক হতে পারে। আর প্রধানমন্ত্রী ৮ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে চীন সফর করবেন বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এই সফরের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সমন্বয় সভা হবে। এই সভায় ঠিক করা হবে কোন কোন এজেন্ডা নিয়ে চীন সফরে আলোচনা ও ঋণচুক্তি হবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, চীনের বিনিয়োগ যেন আরও আসে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনা মন্ত্রী এ দেশে আরও বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রেলপথ ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশন থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত ৩৬৯ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ রেলপথ নির্মাণে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে বৈদেশিক ঋণ প্রায় ৩২ হাজার ১৯৯ কোটি ৯৪ লাখ, বাকি টাকা দেশীয় অর্থায়নে প্রভিশন রাখা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে সরকারি অর্থ ব্যয় করা হবে।

আরো পড়ুন : পটুয়াখালীতে ৮ বছরের শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকার ও মারধরের অভিযোগ

‘ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা পর্যন্ত ব্রডগেজ (বিজি) রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেলপথ নির্মাণের জন্য সমীক্ষা খাতে ৪৯ কোটি টাকা সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে। রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে ২০২২ সালের জুনে। এরপর থেকেই বৈদেশিক ঋণের সন্ধান করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু বৈদেশিক ঋণের উৎস এখনো খুঁজে পায়নি ইআরডি। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। চীনা অর্থায়ন পাওয়ার জন্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলমান। চীনা ঋণ পেতে রেলপথ মন্ত্রণালয় ইআরডিকে আবারও অনুরোধ করবে বলে জানা গেছে।

প্রকল্পের মূল কাজ রেললাইনের মোট দৈর্ঘ্য বা রুট লাইন হবে ২১৪ দশমিক ৯১ কিলোমিটার, এর মধ্যে মেইন লাইন ১৯০ দশমিক ১১ কিলোমিটার ও ব্র্যাঞ্চ লাইন ২৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। তবে ট্র্যাকের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৩৬৯ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে মেইন লাইন ২১৪ দশমিক ৯১ কিলোমিটার ও লুপ লাইন ১৫৪ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। রেলপথে এমব্যাংকমেন্টের দৈর্ঘ্য হবে ১৬৮ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার। ৪৪০টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে, এর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার।

১০টি মেজর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে, এর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। মেজর সেতুগুলোর উভয় প্রান্তে ৩৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। কুমার, কালিগঙ্গা, শিকারপুর, আমতলী, কীর্তনখোলা, পায়রা, পটুয়াখালী, আন্ধারমানিক, টিয়াখালী, খাপরা ভাঙা নদীর ওপর দিয়ে উড়াল রেলপথ নির্মিত হবে।

পুরো রেলপথে থাকবে ১৯টি নান্দনিক স্টেশন
পুরো রেললাইনে ১৯টি নান্দনিক স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হবে। স্থানগুলো হলো- ভাঙ্গা জংশন, বরইতলা, টেকেরহাট, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, উজিরপুর, বরিশাল এয়ারপোর্ট, বরিশাল, দপদপিয়া, বাকেরগঞ্জ, বদরপুর, পটুয়াখালী, কাকুয়া, আমতলী, পায়রা পোর্ট, পায়রা পোর্ট ইয়ার্ড, লেমুপাড়া ও কুয়াকাটা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে সাত বছর। এর মধ্যে দেড় বছর ধরে টেন্ডারিং, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন কাজ করা হবে। সাড়ে চার বছর ধরে প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) শেখ সাকিল উদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাঙ্গা থেকে বরিশাল ও কুয়াকাটা পর্যন্ত দীর্ঘ একটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি করেছি। বিশাল রেলপথটি নির্মাণের জন্য আমরা এখনো কোনো উন্নয়ন সহযোগী খুঁজে পাইনি। সামনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর রয়েছে। আমরা এই প্রকল্পে যাতে চীনের বিনিয়োগ পেতে পারি সেই জন্য ইআরডিকে অনুরোধ জানাবো।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *