শিরোনাম

কেঁচো চাষে ভাগ্য ফিরেছে পিরোজপুরের বদরুল হায়দার বেপারির, পেয়েছেন কৃষি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিশেষ সম্মাননা

Views: 128

এস এম পারভেজ (পিরোজপুর): ‘বদরুল’ পুরো নাম বদরুল হায়দার বেপারী, কৃষি জনপদের মানুষের কাছে একটি অত্যন্ত সুপরিচিত নাম। কেঁচো কম্পোষ্ট সারের মাধ্যমে ২০১২ সালে তার যাত্রা শুরু। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চৌঠাইমহল গ্রামে ১৯৭৬ সালে বদরুলের জন্ম। পিতা মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন বেপারী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ২০১২ সালে একটি দৈনিক পত্রিকায় কেঁচো চাষ নিয়ে প্রতিবেদন পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে; সেই থেকে কাজ শুরু করে দেন বদরুল। এখন কেঁচো বদরুল হিসেবেই সবাই তাকে চিনে।

বদরুল ’চন্দ্রদীপ নিউজকে’ জানান, তার চাচাতো ভাই ফারুক হোসেন বেপারীরর কাছ থেকে ছয় একরের একটি সমন্বিত কৃষি খামার ভাড়া নেন। চুয়াডাঙ্গা থেকে ১৩ হাজার ২শত টাকায় দুই কেজি কেঁচোসহ ছয়টি স্যানিটারি রিং ক্রয় করেন। যাত্রা শুরু হয় ‘জাগো কেঁচো কম্পোষ্ট সারের’ উৎপাদন।

বদরুল জানান, কাজের শুরুতে আশপাশের লোকজন হাসাহাসি করতো, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো। কিন্তু হতোদ্যম হইনি, কাজ চালিয়ে গেছি নিজের মত করে। তবে, এখন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে, বদরুলের নিখুঁত কাজ দেখে পরিবারের সদস্যরাও গর্বিত। বদরুলের নিজের তিনটি খামারে বর্তমানে কেঁচো সার উৎপাদনের পরিমান মাসিক প্রায় ৮৫ মেট্রিক টন। তিনি বিভিন্ন খামার থেকে সোর্সিং করে মাসে প্রায় ১ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন কেঁচো সার বিক্রয় করেন। এক মেট্রিক টন কেঁচো সার ১২ হাজার টাকায় বিক্রয় হয় বলে জানান পদক প্রাপ্ত কেঁচো চাষী বদরুল।

কৃষি উৎপাদন, বানিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরন শিল্প ক্যাটাগরিতে গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি (এআইপি) বদরুল আরও বলেন, কাজের স্বীকৃতি পেতে তিনি সরকারের বিভিন্ন পর্যায় আবেদন শুরু করেন। উচ্চ পর্যায় যাচাই-বাছাই শেষে তাকে জানানো হয় খুশীর সংবাদটি; তিনি সন্মাননা পাবার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।

অত্যন্ত বিনয়ী ও সাদামাটা ডিগ্রী পাশ কেঁচো চাষী বদরুল এ বিষয় তার প্রাথমিক ভাবনার কথা বলতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত হন। বলেন, শুরুতে কেঁচো খামারের সব বিষয় তিনি ভাল বুঝতেননা, যে বিষয়গুলো জানতেননা, তার জন্য তিনি উপজেলা ও জেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রানীসম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিতেন। বদরুলের প্রখর আগ্রহ দেখে কর্মকর্তারাও তার পাশে এগিয়ে এসেছেন। তার কপালে সবসময় চিন্তার ভাঁজ থাকতো আর তাহলো, কৃষিতে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সারের ব্যাবহারের বিষয়টি। তার এই ভাবনাগুলোয় নতুন মাত্রা এনে দেয় কেঁচো খামারের ভাবনায়।

বদরুলের নিজ গ্রাম পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চৌঠাইমহলে। তাঁর সার্বিক সহায়তায় অন্তত ৪১টি কেঁচো খামার গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থানে। ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত (করোনার আগে) ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৬৩টি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ২০ হাজার নগর ও মাঠ কৃষকদের কাছে পৌছান এই বদরুল। প্রশিক্ষন দিয়েছেন আরও প্রায় ৭০ হাজার কৃষককে।

কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২৭ জুলাই কৃষি মন্ত্রনালয় প্রথমবারের মত কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি (এআইপি) সন্মাননা ২০২০ পেয়েছেন তিনি। রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে এ সন্মাননা তুলে দেন কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকসহ অতিথিবৃন্দ।

বদরুলের আশা, কেঁচো সার উৎপাদনের মাধ্যমে বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা এবং পাশাপাশি রাসায়নিক সারের আমদানি ২০ থেকে ৪০ ভাগ হ্রাস করা। তিনি এ বিষয়ে আরও গবেষনা করে কী করে উচ্চতর ডিগ্রী আর্জন করা যায় সে বিষয়টিও মাথা দিয়ে ঝেড়ে ফেলেননি।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *