শিরোনাম

সংযোগ সড়ক নেই, ক্ষেতের মাঝে সেতু

Views: 57

বরিশাল অফিস :: বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মল্লিকডুবা বাজারের দক্ষিণ পাশের খালের ওপর সেতুটির দুই পাশে নেই কোনো সড়ক।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মল্লিকডুবা বাজারের দক্ষিণ পাশের খালের ওপর প্রায় সাত বছর আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুর দুই পাশে নেই কোনো সড়ক। কাজে আসছে না সেতুটি।

সেতুর সুফল বঞ্চিত এলাকাবাসী বলছে, সড়ক না থাকার পরও সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণের সাত বছর পার হলেও সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। চলাচলের সড়ক না থাকায় এই সেতু দিয়ে কখনও কোনো যানবাহন চলেনি। সড়কবিহীন সেতু সরকারের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই না। এদিকে সেতু ব্যবহার না হলেও নির্মাণকাজে অনিয়মে এর বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে।

গত শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মল্লিকডুবা বাজারের দক্ষিণ পাশে মল্লিকডুবা-ভরিপাশা গ্রামের সীমানা খাল। খালের পশ্চিম মাথায় উত্তর-দক্ষিণমুখী সেতুটি নির্মিত। এর দক্ষিণ পাশে পুরোপুরি ফাঁকা, বন-জঙ্গলে ভরা। সেতু থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নুরাইপুর-ভরিপাশা পাকা সড়ক। আর সেতুর উত্তর পাশে শুকনো মৌসুমে মানুষ চলাচলের উপযোগী সরু মাটির রাস্তা, যা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। ওই মাটির রাস্তা দেড় কিলোমিটার দূরে কেশবপুর ডিগ্রি কলেজের কাছে গিয়ে পাকা সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, কেশবপুর ইউনিয়নের উত্তরদিকে অবস্থতি কেশবপুর, বাজেমহল ও মল্লিকডুবা গ্রামের সঙ্গে ইউনিয়নের দক্ষিণের নুরাইপুর বাজার, ভরিপাশা, তালতলি গ্রামে যোগাযোগের জন্য সহজ ও কম দূরত্বের পথ এটি। এই পথে সেতু নির্মাণ করা হলেও সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে সেতুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই বিকল্প হিসেবে বেশি দূরত্বের পথ দিয়ে এসব গ্রামে মানুষ চলাচল করে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজিব হাওলাদার বলেন, ‘সেতু আছে, সড়ক নেই। তাতে কী লাভ হলো? সড়কের অভাবে গাড়ি চলতে পারে না। যার কারণে আমাদের বিকল্প বেশি দূরত্বের পথে চলাচল করতে হয়।’ মো. আনোয়ার খলিফা নামের আরেকজন বলেন, ‘সেতু নির্মাণের সাত বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। এই সেতু নির্মাণ করা সরকারের টাকা অপচয় ছাড়া কিছু না।’

মাহাবুবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতুটি দিয়ে মানুষ কিংবা যানবাহন কখনও চলাচল করেনি। মাত্র সাত বছরে সেই সেতুটির ঢালাইয়ের ইট-সুরকি খসে পড়ছে, রড বেরিয়ে গেছে। তিনি নিম্নমানের কাজের জন্য ঠিকাদার ও তদারক কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. আসাদুল হক জুয়েল বলেন, সেতু নির্মাণের পর যদি যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করা হতো, তাহলে ভরিপাশা ও তালতলি গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সহজে মল্লিকডুবা ও কেশবপুর বাজার, কেশবপুর কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারত। আর মল্লিকডুবা গ্রামের মানুষ খুব সহজে নুরাইনপুর বাজার ও শিক্ষার্থীরা নুরাইনপুর কলেজে আসা-যাওয়া করতে পারত।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্থ এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ২৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাস বলেন, ‘দুই গ্রামের চলাচল সহজ করতে সেতু নির্মাণ করা হয়। সড়ক না থাকায় এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না; এটা সত্য। সেতুর দুই পাশে সড়ক নির্মাণ করতে প্রকল্প নেওয়া হবে, যা দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। এমনটা হলে তা খুবই দুঃখজনক। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *