তবে আশার কথা হলো, এই অসুখ ভ্যাকসিনের মাধ্যমে অনেকটাই আটকানো যায়। হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি, স্ট্রেপটোকোকাস নিউমোনিয়া জীবাণুগুলোই মূলত নিউমোনিয়ার কারণ। এগুলো কিন্তু ভ্যাকসিনে আটকানো যায়।
এছাড়া অ্যান্টি বায়োটিকের মাধ্যমেও এর চিকিৎসা সম্ভব। শিশুদের কীভাবে বাঁচাবেন নিউমোনিয়া থেকে? আক্রান্ত হলেই বা কী করবেন ও কখন তাদেরকে হাসপাতালে নেবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক-
নিউমোনিয়া ফুসফুসের প্রদাহ। এই প্রদাহ কিন্তু ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের কারণে হতে পারে। ফুসফুসের ভেতরে শ্বাস নেওয়ার জন্য কিছু এয়ারস্যাক থাকে, তাতে পুঁজ জমে যেতে পারে। আর তাতে কাশি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট তো বটেই, অবহেলায় আরও জটিল সমস্যা হতে পারে।
নিউমোনিয়া হয়েছে কীভাবে বুঝবেন?
সর্দি কাশি দিয়েই এর সূত্রপাত। ছোট বাচ্চারা তো সর্দি তুলতে পারে না, তারা গিলে ফেলে। এছাড়া ঘন ঘন শ্বাস, হাঁফ ধরে যাওয়া, বুকে ব্যথা হওয়া, এর প্রধান লক্ষণ। নিউমোনিয়া হলে জ্বর তো হয়ই, তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। তার সঙ্গে দিতে পারে কাঁপুনিও।
কোন শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
যেসব শিশুদের কোনো সহ অসুস্থতা আছে, তাদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সিওপিডি, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, অ্য়াজমায় ভুগছে এমন শিশুদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাসের জন্য নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। এছাড়া হাসপাতাল থেকে হসপিটাল অ্যাকোয়ারড নিউমোনিয়াও হতে পারে।
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা কী কী?
ঠিক সময় চিকিৎসা করতে পারলে নিউমোনিয়া কিন্তু সেরে যায়। ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া সারাতে দরকার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। ভাইরাসঘটিত নিউমোনিয়া সারাতে প্রয়োজন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ।
ফাঙ্গাল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে দরকার অ্যান্টি ফাঙ্গাল। নিউমোনিয়া বাড়াবাড়ির স্তরে গিয়ে পৌঁছালে হাসপাতালে ভর্তি করা আবশ্যক। যেমন –
১. পানিশূন্য হয়ে যাওয়া
২. বারবার বমি হওয়া
৩. খেতে না পারা
৪. শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া
৫. বাচ্চা নেতিয়ে পড়া
৬. অসম্ভব শ্বাসকষ্ট, ইত্যাদি।
এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ইনভেসটিগেশনের মধ্যে করতে হয় রক্তপরীক্ষা ও বুকের এক্স-রে।
নিউমোনিয়া আক্রান্ত কোনো শিশুর ক্ষেত্রে যদি বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসক, তাহলে বাড়িতে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে শিশুটিকে
বারবার করে ফ্লুইড দিতে হবে। ডিহাইড্রেশন এড়াতে দিতে হবে ওআরএস। একই সঙ্গে জ্বরের জন্য দিতে হবে প্যারাসিটামল। নিউমোনিয়ার জন্য দিতে হবে অ্যান্টিবায়োটিক।
তবে যে কোনো রোগের ক্ষেত্রেই একটা কথা বারবার বলা হয়। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিয়র। নিউমোনিয়া অনেক ক্ষেত্রে আটকানো যায় ভ্যাকসিনের মাধ্যমে।
প্রথম বছরে ২টি ডোজ দেওয়া হয়। প্রথমে ৬ মাস ও ৭ মাস বয়সে একটা করে ডোজ দেওয়া হয়। তারপর প্রতি বছর একটা করে ফ্লু-শট দেওয়া হয়ে থাকে।
এই ভ্যাকসিনের ডোজগুলো ঠিকঠাক নেওয়া থাকলে, নিউমোনিয়া অনেকটাই আটকে দেওয়া যেতে পারে। দরকার সচেতনতা আর ঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
সূত্র: এবিপি লাইভ