বৈষম্যবিরোধী গণকর্মচারী পরিষদের নেতারা সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নির্বিশেষে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যে মৌলিক বৈষম্য বিদ্যমান, তা দূর করা অত্যন্ত জরুরি।’’ তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বৈষম্য না কমালে প্রশাসনে আরও বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি হতে পারে।
সংগঠনের আহ্বায়ক জিন্নাত আলী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব রাশেদুল আলম ও মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে তারা জানান, জনপ্রশাসনে সংস্কারের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে প্রধান করে একটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু, কমিশনে বিভিন্ন সরকারি সার্ভিসের প্রতিনিধিত্বকারী অংশীজনদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বিশালসংখ্যক নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি।
তারা আরও উল্লেখ করেন, ‘‘যদিও কমিশন নাগরিকদের মতামত সংগ্রহ করছে, কিন্তু সরকারি জনবল কাঠামোর বৃহত্তম অংশ নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এর কোনো বৈঠক হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’’ তারা মনে করেন, জনগণের সরাসরি সেবা প্রদানকারী নন-ক্যাডার কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর না হলে জনপ্রশাসন কখনোই জনকল্যাণমুখী হতে পারবে না।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ‘‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’’তে সুযোগের সমতার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মের শ্রেণিবিভাগে ‘নন-ক্যাডার’ নামে এক ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে, যার ফলে দক্ষ ও মেধাবী সরকারি কর্মচারীরা প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন দফতরের নন-ক্যাডার কর্মচারীদের সমস্যাগুলোর দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন— ‘‘সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে পরিচিতি, মর্যাদা, প্রেষণ, পদোন্নতি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা-প্রশিক্ষণসহ নানান ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান। এসব বৈষম্যের ফলে শুধু একটি অস্থির প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি হয় না, বরং একটি পক্ষপাতমূলক সমাজের জন্ম নেয়।’’
তারা আরও উল্লেখ করেন, চাকরি জীবনের শুরুতেই একই গ্রেডে একজনকে ক্যাডার এবং অন্যজনকে নন-ক্যাডার হিসেবে তকমা দেওয়া হয়, যা চরম বৈষম্যমূলক। ‘‘গেজেটেড অফিসার্স রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৭৮’’ ও ‘‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন (কনসালটেশন) ১৯৭৯’’ অনুযায়ী সরকারি পদগুলো বিভক্ত করা হয়, যেখানে নবম গ্রেডকে ‘গেজেটেড’ এবং ১০ম-২০তম গ্রেডকে ‘নন-গেজেটেড’ পদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
তারা মনে করেন, ‘‘একই গ্রেডের সরকারি কর্মচারীরা হলেও, তাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করার কারণে সরকারি সুযোগপ্রাপ্তি ও মর্যাদায় বড় ধরনের অমিল রয়েছে।’’ তাই তারা প্রস্তাব দিয়েছেন, ‘‘সরকারি কর্মে ক্যাডার-নন-ক্যাডার বিভাজন বিলুপ্ত করে বৈষম্যহীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হোক।’’
মো: তুহিন হোসেন,
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম