পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর কাজল ইউনিয়নের ছোট কাজল হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাময়িক বরখাস্ত সুপার আবু জাফর মো. ছালেহ-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ-বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের পুনঃতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে এ তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিযোগকারী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
তদন্ত কমিটি ও কার্যক্রম
প্রথম তদন্ত যথাযথভাবে না হওয়ার অভিযোগ তুলে পুনঃতদন্তের আবেদন করা হলে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্বাক্ষরিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরজু আক্তার, এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন গলাচিপা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবুল হোসেন ও ছোট কাজল হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো. শাহিন হোসেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগকারী, স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্য গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেন। তবে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ অভিযুক্ত সুপারের কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি এবং তার পক্ষে কোনো ডকুমেন্ট যাচাই করা হয়নি। এতে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী ও স্থানীয়রা।
সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ
স্থানীয়রা জানান, আবু জাফর মো. ছালেহ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—
জাল-জালিয়াতি ও ভুয়া সনদ ব্যবহার করে নিয়োগ বাণিজ্য: মোসাঃ মনিরা বেগম নামে একজনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ।
মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা না থাকা ও ভুয়া যাতায়াত বিল তৈরি করে অর্থ লোপাট।
ভুয়া শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো ও নিজে ক্লাস ফাঁকি দেওয়া।
ম্যানেজিং কমিটিতে অনিয়ম, ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া, ইনডেক্স জালিয়াতি ও রেজুলেশনে ওভাররাইটিং।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করেও অনুপস্থিত থাকা।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
অভিভাবক মাইনুল ইসলাম, আবুল কালাম ও মোশাররফ হোসেন বলেন,
“আমাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সুপারের কাছে কোনো জবাবদিহিতা চাওয়া হয়নি। তাহলে এটা কেমন তদন্ত? আমরা চাই, নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হোক এবং অনিয়মের বিচার হোক।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও অভিযোগকারী মো. সাব্বির বলেন,
“আমরা অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ দিয়েছি। কিন্তু অভিযুক্তের কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি। এতে মনে হচ্ছে, তদন্ত একতরফা হয়েছে। আমরা চাই, প্রকৃত সত্য উঠে আসুক এবং দোষী ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”
তদন্ত কমিটির বক্তব্য
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কৃষিবিদ আরজু আক্তার বলেন,
“আমরা অভিযোগের বিস্তারিত শুনেছি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছি। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে অভিযুক্ত সুপারের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করা হবে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করা হয়েছে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে।”
এদিকে, অভিযুক্ত সুপার আবু জাফর মো. ছালেহ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এখন দেখার বিষয়, তদন্ত প্রতিবেদন কীভাবে প্রকাশিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম