মো: আল-আমিন (পটুয়াখালী): জেলার গলাচিপায় এক সন্তানের জননীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় কাতরাচ্ছে ওই গৃহবধূ ও তার সন্তান।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গলাচিপা সদর ইউনিয়নের পক্ষিয়া লঞ্চঘাট ছয় নম্বর ওয়ার্ড মোসলেম গাজীর মেয়ে ফাতেমা বেগম (২২) নামের এক গৃহবধূকে মারধর করে তার স্বামী হোচেন হাওলাদার।
হোচেন হাওলাদার হচ্ছেন গোলখালী ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের সুহরী গ্রামের রফিক হাওলাদারের ছেলে।
আহত ফাতেমা বেগম জানান, যৌতুকের জন্য প্রায়ই আমার স্বামী আমাকে মারধর করতো। রবিবার রাতে যৌতুকের জন্য পুনরায় আমাকে আমার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে বললে আমি রাজী না হওয়ায় আমার স্বামী আমাকে সারা শরীরে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে।
আমার বাবা গরিব মানুষ। রিক্সা চালিয়ে কোন রকম দিন আনে দিন খায়। আমার বাবা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তারপর আবার বাবার কাছে কীভাবে টাকা চাইবো। আমার স্বামীকে এ কথা বুঝিয়ে বললেও তিনি কোন কথা না শুনে আমাকে মারতে থাকেন। আমি এর বিচার চাই। যাতে আর কোন স্বামী স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি না করে। আমার স্বামীর ঔরসে দুই বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। ছেলের নাম আব্দুল্লাহ। এলাকাবাসী আমাকে উদ্ধার করে গলাচিপা হাসপাতালে ভর্তি করে।
হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার মেজবাহউদ্দিন বলেন, ফাতেমা বেগম আমার চিকিৎসাধীনে ৩য় তলায় ১১ নং বেডে ভর্তি আছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুলাজখম ও কালো কালো দাগ আছে ও মাথায় চোট লেগেছে।
এ বিষয়ে ফাতেমার বাবা রিক্সাচালক মোছলেম গাজী জানান, আমি গরিব অসহায় মানুষ। যখন যেটা পারি আমি আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে দেয়ার চেষ্টা করি। আমার কাছে বেশী দাবী করলে আমি কীভাবে দেবো। আর এর জন্য হোচেন আমার মেয়েকে পিটিয়ে আহত করেছে। আমি মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে হাসপাতালে এসে দেখি মেয়ের দিকে তাকানো যায় না। নাতিটা শুধু কান্না করে। আমি ঔষধপত্র ও চিকিৎসা খরচ চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার মেয়ের জামাই হাসপাতালে দেখতেও আসে নাই। আমি সকলের কাছে এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে ফাতেমার মা রিনা বেগম জানান, আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য প্রায়ই মারধর করে। আমি মেয়ের সুখের জন্য মেয়ের জামাইকে গরু দিয়েছি, গাড়ির জন্য টাকা দিয়েছি। তারপরও জামাই মন ভরাতে পারি নাই। মেয়ের জামাই এখনও যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে মারধর করতে থাকে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হোচেন হাওলাদারের জানান একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এছাড়া কিছু হয়নি বলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে গোলখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, বিষয়টি শুনেছি। দু্ইপক্ষকে ডেকে মীমাংসার ব্যবস্থা করবো।
গলাচিপা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন টুটু বলেন, আমার ইউনিয়নে কোন মানুষের উপর নির্যাতন হবে এটা হতে দেয়া যাবে না। মোছলেম গরিব মানুষ ওর সাথে এরকম হবে বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। আমি মোছলেমকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করব।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদাউস আলম খান বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।