বরিশাল অফিস :: উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পরে গৌরনদী পৌরসভার মেয়রও হাতছাড়া হয়েছে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্র অনুসারীর। গৌরনদী পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে হাসানাতের প্রকাশ্যে সমর্থন পাওয়ার পরেও মেয়র পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচএম জয়নাল আবেদীন বিপুল ভোটে হেরেছেন। তার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সরকারি গৌরনদী কলেজের সাবেক জিএস মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া।
ঘোষিত ফলাফলে নারিকেল গাছ প্রতীকের আলাউদ্দিন ভূঁইয়া পেয়েছেন ১০ হাজার ৫৪৪ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ সমর্থিত জয়নাল আবেদীন মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৮৬ ভোট। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়া অপর দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে চামচ প্রতীকের সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল পেয়েছেন ৪৬৬ ভোট এবং জগ প্রতীকের মো. মফিচুর রহমান রিপন পেয়েছেন ২২৪ ভোট।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলু বলেন, ‘গৌরনদীর সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদের প্রতিবাদের সব স্তরের মানুষ উপজেলা নির্বাচনে হারিচকে (মো. হারিছুর রহমান) বাদ দিয়ে মনিরকে বিজয়ী করেছেন। একই ভাবে হাসানাত ভাই সমর্থিত প্রার্থী জয়নাল আবেদীনের ঘাড়ে হারিচ চেপে বসায় জয়নালকেও পরাজিত করেছেন সাধারণ মানুষ।’
এর আগে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদের আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ সমর্থিত প্রার্থী মনিরুল ইসলাম সদর উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারিয়েছেন। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে মুলাদি থেকে তার সমর্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম মিঠু পরাজিত হয়েছেন।
আসনের আগৈলঝড়া থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুর রইস সেরনিয়াবাত এবং গৌরনদী থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমান হারিচ বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। চতুর্থ দফায় বাবুগঞ্জ থেকে সর্দার খালিদ হোসেন স্বপন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সমর্থন নিয়ে ভোটে পরাজিত হন। এতে করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ অনেকটা ক্ষুণ্ন হয়েছেন। পাশাপাশি ওই সব পরাজিত নেতাদের প্রভাবও কমেছে। একের পর এক উপজেলা নির্বাচনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণে বর্ষীয়ান এই নেতার প্রভাবও অনেকটা কমবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে ভুল ছিল, তার খেসারত তিনি দিয়েছেন। এত দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনি বৈতরণী পার করেছেন তিনি। উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পরাজয়ের পরে হাসানাত আবদুল্লাহর শেষ ভরসা ছিল গৌরনদীর পৌরসভা মেয়র নিয়ে। কিন্তু সেটিও তার হাতছাড়া হয়েছে। এতে করে উপজেলায় তার যে প্রভাব ছিল তা অনেকটা স্তিমিত হবে। দলীয় বিভাজনও দীর্ঘ হবে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘উপজেলা ও গৌরনদী পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে কোনো ধরনের বিভাজন হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় নেতা-কর্মীরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হয়তো মান-অভিমান হয়েছে। তবে বরিশালে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। এতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না।’