পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর নিজ গ্রামে নির্মাণ শুরু করেছিলেন ডুপ্লেক্স বাগান বাড়ি। আর সে কারণেই নিজ এলাকায় কিনেছিলেন ৬০ শতাংশ জমি। এমনটাই জানিয়েছেন আবু জাফরের নিজ এলাকা পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের মিয়া বাড়ির আশেপাশের লোকজন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গত রোববার ও সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পিএসসির দুজন উপ-পরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আটককৃতদের মধ্যে একজন পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর মিয়া। যার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মিয়া বাড়ি।
গলাচিপার কলাগাছিয়া ইউপির ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু জাফর এলাকায় তেমন একটা আসা যাওয়া ছিল না। এ কারণে নিজ গ্রামের অনেকেই তাকে ভালোভাবে চেনেন না। বিশেষ ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে বাড়িতে গেলেও থাকতেন ৬নং ওয়ার্ডের কল্যাণকলস গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে। বয়স্ক অনেকেই চিনলেও যুবসমাজ তাকে তেমন একটা চিনেন না। কথাবার্তায় তাকে খুব ভালো মানুষ হিসেবেই জানতেন গ্রামের পরিচিত ব্যক্তিরা। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার সকলেই বিস্মিত ও লজ্জিত।
আরো পড়ুন : মহিপুরে উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে দিলো অবৈধ স্থাপনা
কলাগাছিয়া গ্রামের কুমারখালী বাজারে আবু জাফরের বিষয়ে জানতে চাইলে বাজারের কাছেই সীমানাপ্রাচীর দেয়া বাগান বাড়ির আদলে ছাদ ঢালাই দেয়া বাড়িটি দেখিয়ে দেন। এর বাইরে এ গ্রামে কিছু আছে বলে জানেন না তবে ঢাকায় তার কি পরিমান সম্পদ আছে তা গ্রামবাসী জানেন না এমনটাই বলছিলেন বাজারে আসা ষাটোর্ধ আবুল মিয়া।
কলাগাছিয়া কুমারখালী বাজার এলাকায় আবু জাফরের ৬০ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে গেলে দেখা যায়, সীমানাপ্রাচীর দেয়া নির্মাণাধীন বাগান বাড়ির চারিদিকে ঝোপঝাড়ে ভরা। বাড়ির প্রবেশমুখে গেট ও ভেতরে বাগানবাড়ির আদলে নির্মাণের কাজ শুরু করে ছাদ ঢালাই পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কলাগাছিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, আবু জাফরের বাড়ি আর আমার বাড়ি কাছাকাছি। তাদের পুরোনো বাড়ি নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার পর চার-পাঁচ বছর আগে কলাগাছিয়া কুমারখালী বাজার এলাকায় ৬০ শতাংশ জমি কিনে নতুন বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বাড়ি নির্মাণে ধীরগতি হওয়ায়র কারণ জানতে চাইলে বাড়িটি বড় করে নির্মাণ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আবু জাফর। এমটাই বলছেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও জানান, আবু জাফরের নিজ এলাকায় এর বাইরে তেমন সম্পদ নেই। যদি থাকে তা অন্যত্র থাকতে পারে। আবু জাফর তেমন একটা এলকায় আসেন না। এমন একটা জঘন্য ঘটনার সঙ্গে তিনি যুক্ত থাকবে এমনটা আমরা আশা করিনি। এতে আমরা লজ্জিত।
কলাগাছিয়া গ্রামের মিয়া বাড়ির ছোট্ট একটি ঘরে অভিযুক্ত আবু জাফরের ভাই মো. জালাল মিয়ার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজী হননি।
অন্যদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনার বিষয়ে আবু জাফরের শ্যালক আমিন উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবু জাফর তেমন লোক নয়। সে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। হয়তো তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে।
কলাগাছিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদের সভাপতি ও অভিযুক্ত আবু জাফরের দূর সম্পর্কের চাচা মো. আউয়াল মিয়া জানান, আবু জাফর ছোট বেলা হইতে এলাকায় আল্লেনা। ওর বোনেইর লগে খুলনায় থাইক্কা লেখাপড়া করছে। ওইখানে বড় হইছে। তবে বাড়িতে না আইলেও এই মসজিদে থাকা এতিমের জন্য মাঝেমধ্যে টাকা পাঠাইতো।