শিরোনাম

ভোলায় ঘরচাপায় বৃদ্ধা আমিন্নেছা মৃত্যু কান্না থামছে না মেয়ের

Views: 27

বরিশাল অফিস :: প্রায় ৪৮ বছর বয়সী রহিমা বিবি। স্বামীর মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মায়ের কাছে থাকতে শুরু করেন তিনি। তার মা আমিন্নেছা বয়স প্রায় ১০০ বছর। তবে সেই মা-ই রহিমার চোখের সামনে করুণভাবে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর শোক কোনোভাবেই কাটছে না রহিমার। মায়ের করুণ মৃত্যুর দৃশ্য এখনো ভেসে ওঠে রহিমার চোখে। তখনই ঢুকরে ঢুকরে কান্না করতে থাকেন তিনি।

ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিপকল বাড়ি সংলগ্ন একটি ঝুপড়ি ঘরে গত ৮ বছর ধরে বৃদ্ধা মা আমিন্নেছার সঙ্গে থাকতেন রহিমা বিবি। তবে সম্প্রতি লালমোহনে বয়ে যাওয়া আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে ওই ঝুপড়ি ঘরটি ভেঙে চাপা পড়ে মারা যান রহিমার বৃদ্ধা মা।

রহিমা বিবি জানান, গত ১০ বছর আগে বাবা মারা যান। এরপর মা একাই ঝুপড়ি ঘরে থাকা শুরু করেন। সম্পত্তি বলতে বাবার রেখে যাওয়া বসতভিটা টুকুই। বাবার মৃত্যুর পর মূলত স্মৃতি আকড়ে থাকতে ওই ঘরটিতে মা থাকতেন। মায়ের অনেক বয়স হওয়ায় কিছুই করতে পারতেন না। তাই প্রতিবেশীরা যা সহযোগিতা করতেন তা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচে ছিলেন। গত ৮ বছর আগে আমার স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর স্বামীর বাড়ি থেকে এসে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করি। কারণ মা বৃদ্ধা এবং কোনো কাজও করতে পারতেন না। তাই মায়ের সঙ্গে থেকে আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম। এছাড়া প্রতিবেশীরাও কিছু সহযোগিতা করতেন। আমাদের সঙ্গে থাকতো আমার ছোট্ট এক নাতনিও। ওর মা ঢাকায় চাকরি করায় তাকে আমাদের কাছে রেখেছি। মানুষের সহযোগিতা ও নিজের কাজের বিনিময়ে পাওয়া সামান্য পরিমাণের অর্থে চাল-ডালে কিনে কোনোভাবে খেয়ে-পরে দিনপার করছি।

তিনি জানান, গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। তখন আমরা সকলে ঘরের মধ্যেই ছিলাম। ওই ঝড়ের তা-বে ঝুপড়ি ঘরটি ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনে ছোট্ট নাতনিকে নিয়ে চৌকির নিচে আশ্রয় নিই। মাকেও চৌকির নিচে নামাবো, এরইমধ্যে ঘরটি দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে যায়। ওই সময় ঘরের নিচে চাপা পড়েন আমার বৃদ্ধা মা। তখন চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা এসে মা এবং আমার ছোট্ট নাতনিসহ আমাকে উদ্ধার করেন। ঘর চাপা পড়ে মা পেট এবং বুকে প্রচন্ড আঘাত পান। ওই আঘাতের তীব্র ব্যথায় মা আমাকে বার বার ডাক্তার আনতে বলেছিলেন। তখন মাকে সকালে ডাক্তারের কাছে নেবো বলে আশ্বাস দিই। তবে এরপর রাত কেটে সকাল হয়েছে। শুক্রবার থেকে দিন বদলে হয়েছে শনিবার। সবই নিয়ম মতো পাল্টেছে। তবে মায়ের আর শরীর ভালো হয়নি। শনিবার সকাল ৭ টার দিকে মায়ের মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আমার চোখের সামনেই করুণভাবে মারা যান তিনি। মৃত্যুর পর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় একইদিন দুপুর ২টার দিকে পাশের বাড়িওয়ালাদের পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের লাশ দাফন করা হয়।

রহিমা বিবি আরো জানান, চোখের সামনে মায়ের করুণ মৃত্যু কোনোভাবেই এখনো মানতে পারছি না। বয়স হয়েছে, আল্লাহ হয়তো এই উছিলায় মাকে নিয়ে গেছেন। তাই মাকে তো আর পাবো না। তবে এখন আমরা যেই ঝুপড়ি ঘরটিতে থাকতাম তা ভেঙে যাওয়ায় রাতের বেলায় অন্যের ঘরে গিয়ে ঘুমাই। কয়েকটি লাঠি দিয়ে আপাতত ঘরের টিনের চালাটা দাঁড় করিয়ে দিনের বেলায় সেই ভাঙা ঘরটিতে এসে চাল-ডাল রান্না করে খেয়ে ছোট্ট নাতনিকে নিয়ে থাকি। নতুন করে এই ঘরটি তোলার আমার কোনো সাধ্য নেই। কারণ আমি ঠিকমতো খেতেই পারি না। শাক-সবজি আর কচুরলতি খোঁজ করে ও মানুষের দেওয়া সহযোগিতা এবং নিজের কাজের বিনিময়ে পাওয়া সামান্য অর্থে চাল-ডাল কিনে খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি। যেখানে নিজের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই কষ্টের, সেখানে এখন নতুন করে ঘর তুলবো কিভাবে? আমার নিজের এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, সেও ভালো নেই। যার জন্য ছোট্ট নাতনি আমার কাছেই থাকে। এছাড়া ছেলে বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রাম থাকে। সে আমার কোনো খোঁজ নেয় না। যার জন্য বেঁচে থাকতে নিজেকেই রোজ সংগ্রাম করতে হয়। এখন সরকারি বা বেসরকারিভাবে আমার ঘরটি নির্মাণ করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে কোনোভাবেই আমি এই ঘরটি তুলতে পারবো না। এছাড়া আমার যেহেতু স্বামী মারা গেছেন, সেজন্য আমাকে সরকারিভাবে একটি বিধবা ভাতা করে দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি। তাহলে কোনোভাবে বাবার রেখে যাওয়া ভিটায় একটু শান্তিতে থাকতে পারবো।

রহিমা বিবির প্রতিবেশী শামসুদ্দীন সরদার বলেন, বৃদ্ধা আমিন্নেছা এবং তার মেয়ে খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যদিয়ে দিনপার করতেন। এখন ঝড়ে ঘরচাপায় বৃদ্ধা আমিন্নেছা মারা গেছেন। তবে ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরটি তার মেয়ে রহিমার পক্ষে নতুনভাবে তোলার কোনো পথ নেই। তাই আমরা প্রতিবেশী হিসেবে সমাজের বিত্তবানদের এবং সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাগুলোকে অসহায় রহিমার ঘরটি তুলে দেওয়ার অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম চন্দ্রদ্বীপ নিউজ২৪.কমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে এই উপজেলায় কেউ মারা গেছেন এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তবে ঝড়ে ঘরচাপায় কারো মৃত্যু হলে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আবেদন করলে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করবো।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *