কলাপাড়া উপজেলা সদরসহ কুয়াকাটা ও মহিপুর অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও জনবল সংকট মারাত্মকভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত করছে। ৫০ শয্যার কলাপাড়া হাসপাতাল, ২০ শয্যার কুয়াকাটা হাসপাতাল এবং মহিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থাও তথৈবচ। হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত হতাশাজনক, বিশেষ করে শয্যার সংখ্যা ও চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন, কিন্তু সেখানে মাত্র ৩-৪ জন চিকিৎসক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এই চিকিৎসকরা সময়মতো এত সংখ্যক রোগীর সেবা দিতে পারছেন না, ফলে অনেক রোগী বাধ্য হচ্ছেন বাইরে গিয়ে চেম্বারে চিকিৎসা নিতে। একইভাবে ভর্তি হওয়া রোগির চাপও অনেক বেশি, যা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা থেকে অনেক বেশি।
কলাপাড়া উপজেলা সদরে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি বর্তমানে মাত্র ১১ জন চিকিৎসক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যদিও এখানে চিকিৎসকের পদ ৩৬টি। অধিকাংশ সময় স্বাস্থ্য প্রশাসক প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকেন, আর একজন চিকিৎসক প্রেষণে পটুয়াখালীতে কর্মরত। ফলে, চারজন চিকিৎসক তিন-সাড়ে তিন শ’ রোগীকে সেবা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত আছেন, যেখানে প্রতিটি রোগীর জন্য মাত্র ৫ মিনিট সময় বরাদ্দ করা সম্ভব হয়। জরুরি বিভাগও হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক সংকটের কারণে।
এছাড়া, হাসপাতালের কর্মচারীদের ৭৬টি পদ খালি রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করানো হচ্ছে, কিন্তু তা যথাযথ নয়। কুয়াকাটা হাসপাতালেও একই ধরনের সমস্যা বিদ্যমান।
প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সরকারি ব্যবস্থা থাকলেও, রোগীরা কিছু পরীক্ষার জন্য বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকদের পছন্দের ক্লিনিকে পাঠাতে। জুন মাসের পর থেকে জরুরি মেডিসিন সরবরাহ না হওয়ার কারণে রোগীরা অনেক প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালের বাথরুম এবং টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা নিয়েও রোগীদের অভিযোগ রয়েছে, এবং নার্স-আয়া, ক্লিনারদের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
রোগীদের খাবারের মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী পারভিন জানাচ্ছেন, হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ পেয়ে হলেও বেশিরভাগ সময় বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়েছে। খাবারের মান সম্পর্কে রোগীদের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, সকালে শুধুমাত্র রুটি এবং কলা দেওয়া হচ্ছে, আর দুপুর ও রাতে সেদ্ধ ডিম ও আলুর ঝোলের সাথে রান্না করা হচ্ছে।
হাসপাতালের আরেকটি বড় সমস্যা হল বিদ্যুৎ সংযোগের অভাব। সিঙ্গেল ফেইজ বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে লোডশেডিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে এবং জেনারেটর থাকলেও সবসময় পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব হয় না। এ কারণে ভ্যাকসিনের মান নিয়ন্ত্রণ এবং সংরক্ষণও যথাযথভাবে করা যাচ্ছে না।
এ সকল সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন, যাতে কলাপাড়া হাসপাতালসহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো রোগীদের উন্নত সেবা দিতে সক্ষম হয়।