পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের মৃত ফারুক মল্লিকের ছেলে সজিব মল্লিক (৩০)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। সজিব ঢাকায় দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। চার মাস আগে ঢাকা থেকে বাসে পটুয়াখালী নিজ বাড়িতে ফেরার পথে বাখেরগঞ্জ এলাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। এতে তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। তাকে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তার বাবার রেখে যাওয়া সহায় সম্পদ ও পৈত্রিক ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে পরিবারটি এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে।
আরো পড়ুন : পটুয়াখালী মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে কেমন চিকিৎসক হবেন?
বর্তমানে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে আন্ধারমানিক নদীর তীরের ঝুপড়ি ঘরে শুয়ে আছেন অসুস্থ সজিব মল্লিক। বিধবা ফরিদার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে দিয়েছেন বিয়ে থাকেন পরের ঘরে। একমাত্র ছেলে সজিবকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতেন ফরিদা। একমাত্র সজিবের আয়েই চলতো পুরো পরিবার। ছেলে শয্যাশায়ী হওয়ায় দিশেহারা মা ফরিদা বেগম। স্বামী ফারুক মল্লিকের মৃত্যুর পর ফরিদা জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী এক নারী। কখনো কোমর বেঁধে নদীতে ধরতেন মাছ, বসত-ভিটের পাশেই কখনো করতেন সবজি চাষ। বর্তমানে বিধবা ফরিদা অসুস্থ থাকায় পারছেন না ছেলের চিকিৎসা করতে। অসুস্থ সজিব এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
প্রতিবেশীরা বলেন, সজিব ঢাকার দিন মজুরের কাজ করতেন। ৪ মাস আগে বাড়িতে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। আমাদের সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করছি কিন্তু এতো টাকা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সমাজের বিত্তবান কিংবা সরকার যদি একটু সহযোগিতা করতো তাহলে পরিবারটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতো। অপারেশনে বেশি দেরি হলে সজিব আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবে।
বর্তমানে অর্থের অভাবে সজিবের চিকিৎসা বন্ধ। তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। অন্যথায় তার জীবননাশের আশঙ্কা রয়েছে। অসুস্থ সজিবের অপারেশনে জন্য দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য সকলের দরজায় সাহায্য সহযোগিতা চেয়েও হয়নি সমাধান। তাই সজিবের চিকিৎসায় বিত্তবানদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান এলাকাবাসীর।
সজীবের মা ফরিদা বলেন, আট বছর বয়সে সজিবের বাবা মারা যায়। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করিনি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছি। অনেক স্বপ্ন ছিল, আজ সব খান খান হয়ে গেছে। ভিটে বাড়ি বিক্রি করেছি।
আরো পড়ুন :পটুয়াখালীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, দিশেহারা সাধারণ মানুষ
ঝুপড়িঘরে শয্যাশায়ী সজিব জানান, পটুয়াখালী, বরিশাল মেডিকেল শেষে ঢাকা আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন মায়ের হাতে কোনো টাকা পয়সা নেই। বিয়া করেছি আড়াই বছরের মেয়ে আছে আমার। মা জীবনে অনেক কষ্ট করেছে আমাদের জন্য। একটু ভালো থাকার জন্য ঢাকায় দিন মজুরের কাজ করতাম। গত জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ বাড়িতে আসার সময় বাখেরগঞ্জ এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় আমার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। ডাক্তার বলছে অপারেশন লাগবে নাহলে আমি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাব। আমারে বাঁচান আমি বাঁচতে চাই বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, নিলগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।