ভোলা বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল নির্মিত হয় ৩৬ বছর আগে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কোন ধরনের সংস্কার বা মেরামত হয়নি। বর্তমানে টার্মিনালটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং এটি এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে কারণ বিকল্প কোন টার্মিনাল নেই। প্রতিদিন শতাধিক বাস ভাঙা এবং খানাখন্দে ভরা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে, যা যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
টার্মিনালের চারপাশের নিরাপত্তা দেওয়াল ভেঙে যাওয়ায়, বাস মালিক ও শ্রমিকরা চুরির আতঙ্কে থাকছেন। যাত্রীদের জন্য উপযুক্ত ছাউনি না থাকায় সড়কে অপেক্ষা করতে গিয়ে তারা বিপদে পড়ছেন, বিশেষত বৃষ্টি ও রোদে। তাছাড়া, পাবলিক টয়লেটের অভাবে নারী যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ হাজার যাত্রী এই টার্মিনাল ব্যবহার করেন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই এই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছেন।
টার্মিনালটি নির্মিত হয় ১৯৮৮ সালে, কিন্তু টার্মিনালের সড়ক এবং অন্যান্য অবকাঠামো এর পর থেকে একবারও সংস্কার হয়নি। প্রায় ৩ একর জমির ওপর অবস্থিত এই টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন পাঁচটি রুটে শতাধিক বাস চলাচল করে। তবে, সড়কটি বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হওয়ায় বাসের যাতায়াতের জন্য এটি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
যাত্রী আশরাফ আলী, ইয়াছিন, অজিৎ চন্দ্র রায় ও মাকসুদুর রহমান জানান, তারা প্রতিদিন সদর থেকে অন্যান্য উপজেলায় যাতায়াত করতে ভোলা বাস টার্মিনাল ব্যবহার করেন। কিন্তু এই টার্মিনালে এসে তাদের টিকিট কাটতে হয় এবং তারপর সড়কে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়, যেখানে কোন ধরনের যাত্রী ছাউনি নেই। ফলে, রোদ-বৃষ্টি কিংবা ঝড়ের মধ্যে অপেক্ষা করতে হয়, যা অত্যন্ত কষ্টকর।
নারী যাত্রী সুমি বেগম, তৃষ্ণা রানী বর্ণিক ও সুমাইয়া আক্তার জানান, এখানে নারীদের জন্য কোন নিরাপত্তা নেই। বিশেষ করে, শিশুদের নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকাটা খুবই বিপজ্জনক। তারা দাবি করেন, দ্রুত এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা উচিত।
বাস চালক মো. সুমন, মো. ইলিয়াস ও মো. শামিম হোসেন জানান, ভাঙা সড়ক ও বড় বড় খানাখন্দের কারণে বাসগুলোকে নিরাপদে চলাচল করানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই খানা-খন্দে বাসে প্রবেশ ও বের হওয়া কঠিন, এবং যেকোনো সময় বাস উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া, নিরাপত্তা দেওয়াল ভেঙে যাওয়ায় বাসের যন্ত্রাংশ ও তেল মবিল চুরি হওয়া বেড়ে গেছে।
ভোলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. মুনতাসির আলম রবিন চৌধুরী বলেন, “বাসস্ট্যান্ডটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও, বিকল্প কোন স্ট্যান্ড না থাকায় এটি এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই, এটিকে দ্রুত আধুনিক বাস টার্মিনালে রূপান্তরিত করা উচিত।”
ভোলা পৌরসভা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিন আরজু জানান, “বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠ বাস টার্মিনালের সড়ক ব্যবস্থা, ড্রেন এবং সড়ক বাতির উন্নয়ন কাজের জন্য একটি ছোট প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর অনুমোদন হলে দ্রুত এই কাজগুলো করা হবে। এছাড়া, পরবর্তীতে বাসস্ট্যান্ডটি একটি আধুনিক বাসস্ট্যান্ডে রূপান্তরিত করা হবে।”
এদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টার্মিনালটি আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কিছু উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।
মো: তুহিন হোসেন,
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম