পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় বেড়িবাঁধের বাইরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের সময় তাদের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়, আর বর্ষা মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার রাতে এই মানুষগুলোকে কাটাতে হয় বিনিদ্র। এই ভয়াবহ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চললেও, এখনও সমস্যা সমাধানের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
ধানখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের মতো অনেকেই প্রতিনিয়ত পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। মিজানুরের বসবাস লোন্দা সেতুর ওপারে, বেড়িবাঁধের বাইরে। দশ বছরের চরম কষ্টের পর তার ঘরের ভিটি কিছুটা উঁচু করা হয়েছে, তবে বর্ষা মৌসুমে ঘরের মধ্যে পানি ঢোকে। শুধু মিজানুর নয়, তার ভাইসহ আরও কয়েকটি পরিবারের একই দশা। ধানখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজউদ্দিন তালুকদার জানান, শুধুমাত্র লোন্দা থেকে নমরহাট বাজার পর্যন্ত বেড়িবাঁধের বাইরে প্রায় এক হাজার পরিবার বসবাস করছে। ইউনিয়নজুড়ে আরও পাঁচ শ’ পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও পটুয়াখালীর অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতেও বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। চম্পাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম বাবুল জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৬০টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। দেবপুর, গোলবুনিয়া এবং পাটুয়ার মতো এলাকার পরিবারগুলো বর্ষার সময় অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিবন্দী হয়ে থাকে। একইভাবে বালিয়াতলীর চরনজীব থেকে বাবলাতলা বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই শ’ পরিবার এবং ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আরও শতাধিক পরিবার চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
লতাচাপলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লার মতে, এই ইউনিয়নের প্রায় ১,৮৭০টি পরিবার অস্বাভাবিক জোয়ারের সময় পানিবন্দী অবস্থায় থাকে। গোড়া আমখোলা পাড়া, মম্বিপাড়া, দক্ষিণ মুসুল্লিয়াবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব পরিবার বসবাস করছে। ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রহিম জানিয়েছেন, গঙ্গামতি ও চরগঙ্গামতি এলাকায় তিন হাজারেরও বেশি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে। বর্ষা মৌসুমে তাদের ঘরবাড়ি প্রায়ই পানিতে ডুবে যায়।
এসব পরিবারের জীবন মান দিন দিন আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা বেড়িবাঁধের অভাবে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। সিডরের মতো দুর্যোগে প্রাণহানির ঘটনার পরও এখন পর্যন্ত সমস্যা সমাধানে কোনও দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
পটুয়াখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা প্রায় ৯০০ পরিবারকে সেমিপাকা ঘরসহ জমি দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে আরও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে নিরাপদ আবাসনে স্থানান্তর করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।