শিরোনাম

জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মাঠ তৈরি করছেন সাদিক আবদুল্লাহ

Views: 48

বরিশাল অফিস : বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র পদ থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরে অপেক্ষমান থাকা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবার জেলা সদর আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে মানুষিক প্রস্তুতি নিয়েছেন।

তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তার এই আকাঙ্খার কথা দলীয় কোন ফোরামে এখনো উপস্থাপন না করলেও সাম্প্রতিক চলমান নানা সাংগঠনিক কর্মসূচিতে এমন অভিপ্রায় ব্যক্ত করে চলেছেন। তার অনুসারী নেতা ও কর্মি-সমর্থকরাও নিশ্চিত হয়ে আগামী নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রাসঙ্গিক আলোচনায় নেতার প্রার্থিতা নিয়ে প্রাক-প্রস্তুতির বিষয়টি উপস্থাপন করার আঙ্গিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তাদের দাবী, ঢাকা থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর বরিশালে প্রত্যাবর্তন করে সাদিক আব্দুল্লাহ সংসদীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রেক্ষাপট রচনায় নূতন আদলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন।

তারই ধারাবাহিকতায় প্রায় প্রতিদিনই ওয়ার্ডভিত্তিক দলীয় কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মাঠ গুছাচ্ছে, এমন ধারনা প্রতীয়মান। শহর কেন্দ্রিক দলীয় এই কর্মসূচি শেষে ইউনিয়ন ভিত্তিক সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করবেন বলে জানা গেছে। এর মধ্য দিয়ে তার প্রার্থিতা নিশ্চিতের দাবী জোরতর করতে কর্মি সমর্থকদের আন্দোলিত করার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে নিজেকে এগিয়ে রাখতে চাইছেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে আগে-ভাগেই সাদিক আব্দুল্লাহর নাম উচ্চারিত হওয়ায় বরিশাল সদর ৫ আসন নিয়ে এখুনি নির্বাচনী আবহ তৈরী হওয়ায় আলোচনায় উচ্চারিত হওয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশি এক এক জনের নাম। সেই তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও নৌ-যান মালিক সমিতির নেতা সাবেক এসপি মাহাবুব উদ্দিন বীর বিক্রম, সাবেক সংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দার এবং প্রেস এ্যান্ড প্যাকেজিং ব্যবসায়ী মসিউর রহমান।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এবার সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা নিয়ে প্রস্তুতির খবরে নূতন কোন মুখ এবার মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় মাঠে নেই। কিন্তু সাদিক আব্দুল্লাহ প্রার্থী হচ্ছেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত হওয়ায় বরিশাল সদর আসনের মনোনয়ন নিয়ে জটিল এক সমিকরন সৃষ্টি হয়েছে বলে আভাস-ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভেতর বিভাজনের রাজনীতিতে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া নেতারা দুই স্রোতধারায় নিজেদের শামিল করে মনোনয়ন নিশ্চিতে কৌশলী লড়াই জমিয়ে তুলতে পারেন।

ঢাকার সূত্রগুলো বলছে, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদ ফারুক শামীম’র বরিশাল ৫ সংসদীয় আসনের প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর গুড লিস্টে নাম রয়েছে। তিনিও চাইবেন যেভাবেই হোক এবারও তার প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে। কিন্তু সাদিক আব্দুল্লাহ শেষমেশ যদি দলীয় প্রার্থির জন্য অনড় অবস্থান নেন তাহলে বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এমন এক জটিল সমিকরণ তৈরী হবে যা কেন্দ্রীয় হাই-কমান্ডকে ভাবিয়ে তুলতে পারে। কারন প্রার্থিতা নিয়ে নাটকিয়ভাবে অপরাপর প্রার্থীরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে চাচ্ছেন, হয় তাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করা হোক, নয়তোবা দুই নেতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে যে কোন একজনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করনে বার্গেডিং পাওয়ার প্রয়োগ করতে পারেন।

এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় একাধিক নেতা জানান, সিটি কর্পোরেশনে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন বঞ্চিত সাদিক আব্দুল্লাহ ক্ষমতা ও শক্তির ভারসাম্য ধরে রাখার রাজনৈতিক স্বার্থ সর্বপরি অস্তিত্ব রক্ষার্থে এবার তিনি সংসদীয় আসনের প্রার্থিতা নিয়ে জোরালো অবস্থান নেয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ দেখছেন না। তাছাড়া ঢাকা থেকে যতটুকু আভাস-ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা মেলে সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থিতা নিয়ে অভিমানী সাদিক আব্দুল্লাহকে সংসদীয় নির্বাচনে তাকে প্রাধান্য দেয়ার অভয়বানী শোনানোর পরই তিনি ৭২ দিন অতিবাহিত শেষে বরিশালে ফেরেন।

বর্তমান বরিশালের আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতে দেখা যায়, সিটি কর্পোরশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে খোকন সেরনিয়াবাতকে চূড়ান্তকরণ এবং বিজয় লাভের মধ্যে দিয়ে সংগঠনটি স্থানীয়ভাবে দুটি স্রোতধারায় অনেকটা আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রকাশ্যে চলে আসে চাচা খোকন সেরনিয়াবাত ও ভাতিজা সাদিক আব্দুল্লাহর মধ্যকার ক্ষমতা বা নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই এবং দুটি স্রোতধারার চালকের আসনে এই দুই নেতা অসীন হয়ে সাংগঠনিক কারিশমা দেখাতে শুরু করেছে। এক দিকে চাচার সাথে শক্তির ভারসাম্য রক্ষা অন্যদিকে প্রার্থিতা নিয়ে জাহিদ ফারুক শামিমের সাথে লড়াইয়ে সাদিক আব্দুল্লাহকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যেকার নগর রাজনীতিতে এই বিভাজন নূতন নয়, মূলত গত সংসদীয় নির্বাচনের পর থেকেই মেয়র সাদেক আব্দুল্লাহর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম। কিন্তু পানি সম্পদপ্রতিমন্ত্রী সদর আসনের সংসদ হয়েও গত ৫ বছরে মেয়র সাদিকের সাথে লড়াই করে পেরে উঠেনি।

এমনকি মাঠেও নামতে পারেনি। সাংগঠনিক শক্তির দিক থেকে সাদিক নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড নিজের নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পাশাপাশি তার পিতা জেলা আওয়ামী লীগের কর্ণধর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারীদের সম্মিলিত শক্তিতে মন্ত্রী হওয়া সত্বেও জাহিদ ফারুক শামিম নিজের সাংগঠনিক কাঠামো তৈরী করতে ব্যর্থ হন। তার রাজনীতি হয়ে পড়ে পানি উন্নোয়ন বোর্ডের ডাক-বাংলা কেন্দ্রিক। মাঝে ৮ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধাচরন করে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর শিবিরে যুক্ত হলে বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কিছুটা নূতন মাত্রা যুক্ত হয়। এ সময় জাহিদ ফারুক শামিম কিছুটা প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসতে শুরু করেন। তবে নগরীতে বড় ধারনের কোন শো-ডাউন দিতে পারেননি অথবা সংঘাত এড়িয়ে চলতে এই কৌশল নিয়েছিলেন। কিন্তু দুই নেতার বাকযুদ্ধ সময় অসময় জোরালো রূপ পেয়েছিলো।

দলীয় সূত্র জানায়, মেয়র প্রার্থী হিসেবে খোকন সেরনিয়াবাতকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়ে বরিশালমূখী রাজনীতিতে ধাবিত করলে জাহিদ ফারুক শামিম সমর্থিতরা নয়া এই রাজনীতিবিদের সাথে যুক্ত হলে সাদিক আব্দুল্লাহ সাময়িক কোনঠাসা অবস্থায় পড়েন। একাধিক রাজনৈতিক সূত্রের দাবী খোকন সেরনিয়াবাতকে সামনে রেখে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এই শিবিরের নেতৃত্বের কলকাঠী নাড়তে থাকেন। ফলে সাদিক আব্দুল্লাহ বিভাজনের রাজনীতির নূতন মাত্রা সৃষ্টির অনুঘটক হিসেবে জাহিদ ফারুক শামিমকে দায়ী করে তাকেই প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে ভাবছেন, যতটানা চাচা খোকন সেরনিয়াবাতকে শত্রুভাবাপন্ন মনে করছেন। তার সমর্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার অভিমত জাহিদ ফারুক শামিমকে দমানো গেলেই চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টানা-পোড়নের মধ্যে পরবে, এমনটি ভেবেই সাদিক আব্দুল্লাহ যে কোন উপায় সদর আসনের প্রার্থী হতে মনস্থির করেছেন। সাদিকের এমন মনোভাব আঁচ করেতে পেরে জেবুন্নেছা আফরোজ ও মাহাবুব উদ্দিন বীর বিক্রম এখন তার অনুকূলে এসে একত্রিত হয়ে দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন অন্তত আগামী নির্বাচনে জাহিদ ফরুক শামিম যেন মনোনয়ন না পান।

ধারণা পাওয়া গেছে যে, এই অংশের রাজনৈতিক অংক হচ্ছে সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বার্গেডিং পাওয়ার হিসেবে এই দুই প্রার্থী তাকে সমর্থন জুগিয়ে দলীয় হাই কমান্ডকে এক ধারণের চাপের মুখে ফেলতে চাইবে। শেষমেষ যদি সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরী হয় তাহলে মাহাবুব উদ্দিন বীর বিক্রম বা জেবুন্নেছা অফরোজ এদের যে কোন একজন পাল্টা দাবী তুলবেন প্রার্থিতা চেয়ে।

অপর একটি সূত্রের অভিমত হচ্ছে, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী তার প্রার্থিতা নিয়ে অনেকটাই নির্ভার বলে তার চলন-বলন বলে দেয়। তাছাড়া নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য হওয়ায় এই নেতার সুপারিশ বা সমর্থন জাহিদ ফারুকের জন্য সহায়ক হবে ভেবে তার প্রার্থিতা নিশ্চিত বলে মনে করছেন। এমন আভাস পেয়ে বলরাম পোদ্দার ও মসিউর রহমান উভয় মনোনয়ন প্রত্যাশি এখন এই শিবিরে যুক্ত হয়েছেন। যদিও বলরাম পোদ্দার তাদের সাথে একত্রিত হয়ে মাঠে নামলেও মশিউর রহমানকে একনো প্রকাশ্যে খোকন সেরনিয়াবাত ও জাহিদ ফারুক শামিমের সম্মিলিত কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা যায়নি।

এই অংশের নেতৃবৃন্দের ধারণা, একই শহরে চাচা যেখানে মেয়র সেখানে ভাতিজাকে সাংসদীয় প্রার্থী করার ভাবনা-চিন্তায় প্রধানমন্ত্রী স্বজনপ্রীতির দায় ঘাড়ে নেবেননা। ফলে অন্য কোন বিকল্প বা শক্তিধর নেতা না থাকায় তাদের ধারনা এবারও সদর আসনের প্রার্থিতা দৌড়ে জাহিদ ফারুক শামিমই এগিয়ে থাকবেন। তাছাড়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত পারিবারিক সম্পর্কের টানা-পোড়ন এবং নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্বের স্বার্থে কোনভাবেই চাইবেন না সাদিক আব্দুল্লাহ এই শহরে জনপ্রতিনিধির তকমা লাগিয়ে তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠুক। বরং তিনি জাহিদ ফারুক শামিমকে পাশে রেখে সাদিকের সাংগঠনিক ভিত নড়বরে করে দিতে তাকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে সামনে রেখে নিজেকে এগিয়ে নিতে চাইবেন। এখন পর্যন্ত সে ধরনের চিত্রই দৃষ্টি নিবন্ধিত হচ্ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাবনায়।

এমন সমিকরণে সাদিক আব্দুল্লাহ সদর আসনে দলীয় প্রার্থিতা চ’ড়ান্ত করণে কতটুক সহায়ক ও প্রধানমন্ত্রীর মন জয় করতে পারবেন এমন প্রশ্ন নির্বাচন কেন্দ্রিক আলোচনায় প্রাধান্য পেতে শোনা যাচ্ছে। রাজনীতির নানান হিসেব-নিকেশে সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ- সংশয় থাকলেও দলীয় হাই-কমান্ড এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে মাঠের রাজনীতির শক্তি-সমর্থের বিষয়টির বিবেচনায় আনলে প্রেক্ষাপট পাল্টে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে এই নেতার অনুসারীরা খানিকটা আশাবাদী।

সাদিক পন্থিদের ধারণা তার এবং পিতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর যে ভোট ব্যাংক রয়েছে এবং ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪ ইউপি চেয়ারম্যানসহ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু ও ভাইস-চেয়ারম্যান রেহানা পারভিন তাদের অনুকূলে থাকা সর্বপরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বর্তমান আওয়মী লীগ বিরোধী চলমান আন্দোলন সংগ্রাম অগ্নিরূপ ধারণ করলে সার্বিক বিবেচনায় তা স্থানীয়ভাবে মোকাবেলায় খোকন সেরনিয়াবাত ও জাহিদ ফারুক শামিম একাট্টা হয়েও তা সামাল দিতে পারবেন না।

বিপরীতে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ পুত্রের পক্ষাবলম্বনে রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগের পাশাপাশি সাদিকের নিজস্ব সংগঠনিক শক্তি ও তেজদ্বীপ্ত মনোভাবের কাছে রাজপথে অন্যকোন দল টিকে থাকা অসম্ভব। ফলে সাদিক আব্দুল্লাহর শক্তি ও সাংগঠিন বুদ্ধিদৃপ্ত রাজনীতিতে অপ্রতিদ্ব›দ্বী হওয়ায় অবশ্যই তা ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দেয়ায় তাকে সংসদীয় আসনে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনলে একই শহরে চাচা-ভাতিজা দুই পদে থাকা নিয়ে আলোচনা ম্লান হয়ে যেতে পারে। জাহিদ ফারুক শামিম পন্থিরা এ ধরনের আশঙ্কা আমলে আনতে চাচ্ছেন না সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে বঞ্চিত হওয়ার নেপথ্যে সাদিক আব্দুল্লাহর নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ড স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মূল্যায়ন করায়।

ঢাকার আরো একটি সূত্র বলছে, সাদিক ভার্সেস শামিম কেউ কাউকে ছাড় দেবে না এমন ভাবনা থেকে দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা রাখতে শেষাবধি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানককে প্রার্থী করলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। ওই সূত্রটির দাবী বরাবরই ঢাকায় নির্বাচন করে আসা জাহাঙ্গীর কবির নানক মাঝে বরিশাল নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং পরে এই আলোচনা থেকে চুপসে গেলেও এখন তিনি পরিস্থিতি বুঝে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের আকাঙ্খা প্রকাশ করতে পারেন। আবার জাহাঙ্গীর কবির নানক বা জাহিদ ফারুক শামীমের প্রার্থিতা নিয়ে জোর বিরোধী বলয় তৈরী করলে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দারকে সামনে নিয়ে আসতে পারে।

বলরাম পোদ্দার দীর্ঘদিন ধরে সাদিক আব্দুল্লাহ পিতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর আসন গৌরনদী-আগৈলঝাড়া আসন থেকে নির্বাচন করার মানুষিকতা পোষণ করে আসছেন। কিন্তু সেই সুযোগ দিতে কোনভাবেই নারাজ সেরনিয়াবাত পরিবার। তারা আগে-ভাগেই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর শারীরিক দুর্বলতা অথবা নির্বাচন করতে অক্ষম হলে তার ছোট পুত্র আশিক আব্দুল্লাহকে ড্যামি প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে প্রস্তুত রাখতে রাজনৈতিক চর্চায় মাঠে রাখতে দেখা যাচ্ছে।

সূত্রমতে, জাহাঙ্গীর কবির নানকও পিতা-পুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও সাদিক আব্দুল্লাহ বিরোধী। তাছাড়া পাশর্^বর্তী জেলা ঝালকাঠী আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা আমুর হোসেন আমুও একই মনোভাবাপন্ন। উভয় নেতাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য। হাসানাত পরিবারের ধারণা এই দুই নেতা সাদিক আব্দুল্লাহর ঘোরতর বিরোধীতা করায় খোকন সেরনিয়াবাতের বরিশাল রাজনীতিতে উত্থান ঘটেছে সিটি মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে। অনেকেরই ধারনা আমির হোসেন আমু ও জাহাঙ্গীর কবির নানক আঞ্চলিক রাজনীতির প্রভাব প্রতিপত্তি ধরে রাখতে সাদিক আব্দুল্লাহ সদর আসনে মনোনয়ন পাক সেটা কোনভাবেই চাইবে না। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তারা জাহিদ ফারুক শামিমকেই সমর্থন জোগাবে মনোনয়ন বোর্ডের টেবিলে। পাশাপাশি প্রতিদান স্বরূপ খোকন সেরনিয়াবাতও সেটিই চাইবেন অন্তত তার সহায়ক শক্তি হিসেবে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাই সদর আসনে দলীয় প্রার্থী হোক।

হাসানাত পরিবারের ঘনিষ্ট একটি সূত্রের দাবী, সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে খোকন সেরনিয়াবাতকে প্রার্থিতা করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিভাজন এবং প্রভাবশালী একটি অংশ সাদিকের পক্ষে অবস্থান নিলেও সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। এখন আত্মীয়তার ওই অংশটি চাইছে এবার সংসদীয় মনোনয়ন নিয়ে সাদিক আব্দুল্লাহকে যেন বঞ্চিত না করা হয়। এদের মধ্যে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর এক বোন ও তার দুই পুত্র কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি পরশ ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তাপস উভয়ে চাচ্ছেন মামাতো ভাই সাদিকই আসুক সদর আসনের দলীয় প্রার্থী হয়ে। তাদের আশঙ্কা সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়রের পর সংসদীয় প্রার্থী হতে ব্যর্থ হলে বরিশাল রাজনীতিতে অস্তিত্ব সংকটে পরবে। যতদ্দুর নিশ্চিত হওয়া গেছে, প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন জনপ্রতিনিধি নয়, সাদিক আব্দুল্লাহ মাঠের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। কিন্তু খোকন সেরনিয়াবাতের রাজনৈতিক পদ-পরিচয় নিশ্চিতে মহানগর কমিটি ভেঙ্গে তাকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার গুঞ্জন রয়েছে। যে কারনে আত্মীয়তার এই বলয়টি ইতিমধ্যে সদর আসনের মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির তালিকায় সাদিকের নাম অন্তুরভূক্তিতে নানামূখী প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে অথবা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে।

ফলে একদিকে আত্মীয়তার চাপ পাশাপাশি বরিশালের মাঠের রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে গেলে পিতা-পুত্র তথা হাসানাত ও সাদিকের বিকল্প নেই এমনটি প্রধানমন্ত্রীর ভাবনায় থাকলেও এই অঞ্চলের প্রভাবশালী নেতাদের বিরোধিতায় জাহিদ ফারুক শামীম মনোনয়ন নিয়ে নিজেকে নির্ভার ভাবলেও বাস্তবতার শেষ দৃশ্যে তিনি মনোনয়ন পেলেও সেরনিয়াবাত পরিবারের সাংগঠনিক কারিশমায় মাঠে টিকতে পারবেন কিনা সেই আশঙ্কা ক্রমান্বয়ে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠতে পারে এবং সে ধরনের প্রেক্ষাপট এখনই তৈরীর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাদিক আব্দুল্লাহ নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চাইছেন এভাবেই যে, হয় তাকে মনোনয়ন দেয়া হোক নচেৎ সদর আসন হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নিতে তাড়িত করুক।

এমন হিসাব-নিকাশ কষেই সাদিক আব্দুল্লাহ এখন ক্ষমতার চেয়ে সংগঠনকে নিজের আয়ত্তে¡ আনতে একের পর এক কর্মসূচী দিয়ে মাঠ গড়ম করে রাখছেন। তার সমর্থিত নেতা কর্মিরাও আশাবাদী হওয়ায় দলীয় কর্মসূচিতে সাদিক আব্দুল্লাহর ডাকে আবার সাড়া দিচ্ছে বিধায় চলমান ওয়ার্ড ভিত্তিক অনুষ্ঠানসমূহে লোকে-লোকারন্য হতে দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকেই আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনে সাদিক আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *