বরিশাল অফিস :: বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ও চরাদী ইউনিয়নের গোমা পয়েন্টে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে চমৎকার নৈসর্গিক দৃশ্য সম্বলিত গোমা সেতু। এ সেতুর নামকরণ প্রস্তাবিত মরহুম ইউনুস খান (গোমা সেতু)। ইতিমধ্যেই সেডুর দুই পাশে সড়কের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। তবে ওপারের গোমা অংশ সড়কটি পেয়ারপুর বাজার পর্যন্ত গিয়ে অনেকটা থমকে গেছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
আবুবকর আলম নামের এক যুবক জানান , পেয়ারপুর বাজারের ভিতর সরু সড়কের সাথে মিশেছে এই সড়ক। ফলে যানবাহন চলাচল ঐ বাজার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। তবে এই সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের তিন উপজেলার যাতায়াত, বাণিজ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে এবং সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। যদিও এখানের উভয় পারের ঘাট ইজারাদাররা সেতুর কাজ আরো বিলম্ব হলেই খুশী। তারা বিভিন্ন ভাবে এই কাজ যেন আরো পিছিয়ে যায় সে চেষ্টাও করছেন।
তবে এই অভিযোগ স্বীকারও করে নেন ইজারাদার সাইদুল মেম্বারের সাথীদের কয়েকজন।
তারা বলেন, তিন বছর আগে শেষ করার কথা বলে ছয় বছরেও শেষ করতে পারেনি যে ব্রীজ। সেই ব্রীজ খুব শীঘ্রই হবে তা আর বিশ্বাস কি। ব্রীজ না হলেতো আমাদেরই লাভ বেশি। টোল ঘরে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের যাতায়াত। মাথাপিচু ১০ টাকা ও মোটরসাইকেল ৫০ টাকা করে পারাপার এই গোপালপুর ও গোমা খেয়াঘাটে। তাই ঘাট ইজারাদারদের চাওয়া ব্রীজের উদ্বোধন যেন আরো দেরীতে হয়।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে বরিশালের দিনারেরপুল-লক্ষীপাশা -দুমকী জেলা আঞ্চলিক সড়কের চরাদি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের এই খেয়াঘাট ঘুরে দেখা গেছে ঈদের ছুটি শেষে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম গামী মানুষের ভিড় শুরু হয়েছে খেয়াঘাটে। পটুয়াখালীর বাউফলের ফরিদপুর, মির্জাগঞ্জ, বরিশালের বাকেরগঞ্জের বাহেরচর, দুধল, কবিরাজ থেকে আসা শহরমুখী মানুষের রীতিমতো ভিড় পরেছে খেয়া পারাপারের জন্য। ফেরীও চলছে একটি। তবে তা শুধু বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক লরি নিয়ে। এই নদীর নাম রাঙামাটি। নদীর উপর সড়ক ও সেতু বিভাগের অধীনে নির্মাণ প্রকল্পে ২০১৭ সালে ৫৭ কোটি ৬২ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ৩ বছর মেয়াদের ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছিল। ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান এম খান গ্রুপ এই কাজ শুরু করে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এই কাজের ভিক্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০২০ সালের জুনে। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালে বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিলো।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ ৪৪ ভাগ সম্পন্ন হলেও তখন উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তোলে বিআইডব্লিউটিএ। ফলে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পরে দীর্ঘ ৯ মাস কাজ বন্ধ ছিল। পরে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের দফায় দফায় সভা এবং বিশেষজ্ঞ দলের পরিদর্শনের পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতায় সেতুর সংশোধিত প্রকল্প গ্রহণ করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, প্রথম প্রকল্প অনুযায়ী, মাঝ বরাবর সেতুর উচ্চতা রাখা হয়েছিল সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় ৭ দশমিক ৮৬ মিটার। পিলার স্থাপনের পর বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি তুলে জানায়, এ উচ্চতায় রাঙ্গামাটি নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য উচ্চতার প্রয়োজন কমপক্ষে ১২ দশমিক ২ মিটার।
সওজ থেকে দাবি করা হয়, উচ্চতা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চূড়ান্ত সম্মতিপত্র নিয়েই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্বের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে নিষ্পত্তি হয়।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত প্রকল্পে সেতুর নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নদীপথ সচল রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র দাবি অনুযায়ী, সেতুর মাঝ বরাবর সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় ১২ দশমিক ৪ মিটার উচ্চতা রেখে নতুন নকশা করা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৩৪ কোটি ৮২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
প্রকল্পে বলা হয়েছে,বরিশাল-লক্ষ্মীপাশা-দুমকি জেলা সড়কের ১৪ কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রশস্ত দুই লেনে সেতু নির্মিত হবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ২৮৩ দশমিক ১৮৮ মিটার। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে বরিশালের সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, বিআইডব্লিউটিএর দাবি অনুযায়ী, সংশোধিত প্রকল্পে সেতুর মাঝে উচ্চতা রাখা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ মিটার। এজন্য নদীর মধ্যে দুটি পিলারের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং গার্ডার নির্মাণে কংক্রিটের বদলে স্টিলের পাত ব্যবহার করা হবে। সেতুর( ৩,৪) নং পিলারের গার্ডার নির্মাণ কাজের দরপত্র হয়েছে। ইতিমধ্য সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ শেষ প্রায়। ২০২৪ সালের জুন মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
যদিও ইতিপূর্বে এক সাক্ষাৎকারে সুমন বলেছিলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই কাজ শেষ হবে। এবার জুনে বলছেন। যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।