চন্দ্রদ্বীপ লাইফস্টাইল :: জীবনে কখনো জ্বর হয়নি- এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছোটরা তো বটেই, বড়রাও বছরে অন্তত একবার জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের মাত্রা রোগ ভেদে অল্প বা বেশি হতে পারে। কেউ কেউ অল্প কিছুদিন জ্বরে ভোগেন, কারও আবার দিনের পর দিন, এমনকি মাসের পর মাস জ্বর আসে। আসলে জ্বর কোনো অসুখ নয়, অসুখের লক্ষণ, একটি সাধারণ উপসর্গ। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তাকে জ্বর বলে।
বিভিন্ন কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। জ্বরের প্রধান কারণ হলো জীবাণুর আক্রমণ বা ইনফেকশন। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ইনফেকশন হতে পারে আর এর মূলে থাকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ইত্যাদি জীবাণু। এছাড়া অনেক সময় ইনফেকশন ছাড়াও জ্বর হতে পারে, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের কানেকটিভ টিস্যু ডিজিজ, লিম্ফোমা, এমনকি ক্যানসারেও। আশ্চর্য মনে হলেও সত্য, ওষুধ খাওয়ার কারণেও জ্বর হয়, যাকে বলে ‘ড্রাগ ফিভার’। তাই রোগী অন্য কোনো রোগে কি কি ওষুধ খায়, তা দেখে নিয়ে বিশ্লেষণ করা জরুরি।
ডাক্তারদের খেয়াল রাখতে হবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী কৃত্রিমভাবে থার্মোমিটারের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জ্বর দেখাতে পারে। একে ‘কৃত্রিম জ্বর’ বা ‘ফাক্টিসিয়াস ফিভার’ বলে। এসব রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরী। আবার অনেক রোগী আছেন, যাদের জ্বর না থাকলেও জ্বর-জ্বর লাগে বলে অভিযোগ করেন ও ঘনঘন ডাক্তারের কাছে যান। পরীক্ষায় এদের কিছুই ধরা পড়ে না, থার্মোমিটারেও জ্বর পাওয়া যায় না। আরও একটা বিষয় রোগী চিকিৎসকের মনে রাখতে হবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে জ্বরের কারণ সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলে পিইউও বা পাইরেক্সিয়া অফ আননোন অরিজিন অর্থাৎ যে জ্বরের কারণ জানা যায় নেই। অনেক সময় ডাক্তারের জন্যও এ ধরনের জ্বরের রোগী অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেখা যায়, অনেকদিন ধরে বিভিন্ন রকমের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও কোনোভাবেই জ্বরের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ি। দেখা যায়, একদিনের সামান্য জ্বরেই কেউ কেউ চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাই, নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য অনুরোধ করি। অনেকে আছেন, যারা অনেক দিনের জ্বর নিয়েও ঘোরা ফেরা করছেন, চিকিৎসার প্রয়োজন বোধ করছেন না। দুটোই খারাপ। দীর্ঘদিনের অল্প-অল্প জ্বর থাকলে বা সাধারণ চিকিৎসায় সেগুলোর কোনো উন্নতি না হলে তখন তাকে অবহেলা না করে অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
ডাক্তারদের উচিত হবে, রোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত ইতিহাস নেওয়া, জ্বর কখন আসে কখন যায়, অন্য কোনো উপসর্গ আছে কিনা, যেমন কাশি, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, বিকেলে জ্বর রাতে ঘাম, গিরায় গিরায় ব্যথা ইত্যাদি। এই ধরনের জ্বরের কারণ হিসেবে মনে রাখা দরকার, কোনো কোনো বিশেষ রোগ, যেমন যক্ষ্মা, কোলাজেন ডিজিজ, নানা রকম ক্যানসার, এইডস ইত্যাদি জ্বরের কারণ হতে পারে। চিকিৎসক রোগীর উপসর্গ ও লক্ষণ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগের কারণ বের করবেন। মনে রাখতে হবে, অযথা অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেন না করা হয়, আবার যা প্রয়োজন তা যেন বাদ না যায়।