শিরোনাম

ঝালকাঠিতে গাছ থেকে ৫০ টাকায় কেনা ডাব শহরে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়

Views: 35

বরিশাল অফিস :: তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমের দাপটে সবাই অস্থির। পানি স্বল্পতা থেকে বাঁচতে এ সময় এখানে সবারই পছন্দ ডাবের পানি। এ সময় ঝালকাঠির ডাব ট্রাকে করে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে। গাছ থেকে ৫০ টাকায় কেনা ডাব ক্রেতাদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

ঝালকাঠিতে ডাবের ১২ মাসই ফলন হয়। তবে গ্রীষ্মকালে চাহিদার কারণে এর সরবরাহও বেশি।

ডাব ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারবাকপুর ও শুক্তাগড় ইউনিয়নের নারিকেল বাড়িয়া এলাকায় রয়েছে ডাবের একাধিক মোকাম। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে খুচরা ক্রেতারা ডাব কিনে মোকামে নিয়ে পাইকারদের হাতে তুলে দেন। প্রতিটি ডাবের (আকারভেদে) ক্রয়মূল্য ৫০ থেকে ৬৫ টাকা গাছ মালিককে দিতে হয় ।

দেখা যায়, ২/৩ জন মিলে গ্রুপভিত্তিক ডাব ক্রয় করেন। কেউ গাছে উঠেন, কেউ নিচে দাঁড়িয়ে দড়ি দিয়ে ডাব অক্ষত নামাতে সাহায্য করেন। আবার কেউ ডাব নামানোর পরে ছড়ি থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে পরিস্কার করে এক জায়গায় জমা করেন। সারাদিনের পরিশ্রমের মাঝে নাস্তা, গাড়িভাড়া দিয়ে পাইকারি বিক্রির মোকামে পৌঁছাতে ডাবপ্রতি আরো ৫ টাকা খরচ হয়। এরপরে পাইকারদের কাছেও ডাবের আকারভেদে ৬৫ টাকা থেকে ৮০টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়।

পাইকার সেই ডাব কিনে ট্রাকে লোড দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বড় বড় শহরগুলোর আড়তে পৌছে দেন। ট্রাকে উঠিয়ে সাজিয়ে গাড়ি ছাড়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রক্রিয়া করতে আরো ২/৩জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের বেতন এবং গাড়ির যাবতীয় খরচ শেষে প্রতিটি ডাব আড়তে পৌঁছাতে প্রায় একশ টাকা খরচ হয়।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুচরা ক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ডাবের আকার অনুযায়ী ৫০ থেকে ৬৫ টাকা দরে প্রতিটি ডাব ক্রয় করি। গাছে ওঠা ও সরবরাহের পরিশ্রম নিয়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ পর্যন্ত দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে ডাব কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়।

খুচরা ক্রেতা জাকির ও আবুল হোসেন বলেন, এই রৌদে গ্রামে ঘুরে ঘুরে গাছের মাথায় উঠে ডাব পাড়তে হয়। এতে কি যে কষ্ট হয়, তা যে ওঠে সেই বুঝে। যা কথা বলে বুঝানো যাবে না। এরপর ডাব পেড়ে নামিয়ে হিসেব করে গাছ মালিককে দাম দিয়ে, ক্ষুধার্ত অবস্থায় নাস্তা করে, গাড়ি ভাড়া দিয়ে মোকামে পৌঁছাতে সময়-শ্রম-খরচ যা হয় তাতে ব্যবসা সে অনুযায়ী পাই না। ডাবের পানি ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে প্রতিটি ডাবের দাম ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দাম পড়ে। আর আমরা পাই তার প্রায় অর্ধেক। দুই/তিন হাত বদলের কারণে আমরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

পাইকারি ক্রেতা মো. দুলাল হোসেন বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের বড় বড় শহরের আড়তে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত বহন খরচ পথে পথে বিভিন্ন ধরনের রোড খরচ দিয়ে প্রতিটি ডাবে একশ টাকারও বেশি খরচ পড়ে।

আড়তদারদের কাছ থেকে আবার খুচরা বিক্রেতারা কিনে নিয়ে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে প্রতিটি ডাব বিক্রি করে।

প্রান্তিক পর্যায়ের নারিকেল চাষিদের কাছ থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত হয়ে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছতে দাম অনেক হলেও মূলত প্রকৃত চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ চাষিদের।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি জেলায় ১ হাজার ১শ ৭৭ হেক্টর জমিতে নারিকেলের বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩শ ৯৫ হেক্টর, নলছিটি উপজেলায় ৩শ হেক্টর, রাজাপুর উপজেলায় ২শ ২০ হেক্টর, কাঁঠালিয়া উপজেলায় ২শ ৬২ হেক্টর জমিতে নারিকেল গাছের আবাদ রয়েছে। এতে কয়েক লাখ গাছ রয়েছে। যা এ অঞ্চলের ডাবের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *