ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় সুগন্ধা নদীর ভাঙন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ ধারণ করেছে। নদীটির তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যার মধ্যে রয়েছে শতবর্ষী স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, সড়ক, সেতু ও অনেক বাড়ি। স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন, গাছপালা কেটে ফেলছেন এবং বেশ কিছু এলাকা চিরতরে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
প্রতিবছরই নদীর তীরবর্তী এসব এলাকার ভাঙন বাড়ছে, তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। পাউবো অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুগন্ধা নদীর ভাঙন রোধে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে এবং ইতোমধ্যে দুই ধরনের বরাদ্দও এসেছে। তবে কাজ শুরু করার নির্দিষ্ট সময় জানানো হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, সুগন্ধা নদী ক্রমেই তাদের বসতভিটা, জমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গিলে খাচ্ছে। বিশেষ করে মগর ইউনিয়নের বহরমপুর গ্রামে নদী খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। ওই এলাকায় নদীর ভাঙনে দুটি শতাধিক বসতবাড়ি, সরকারি সেতু, সড়ক এবং মসজিদসহ বহু মূল্যবান স্থাপনা ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যেমন কাঠিপাড়া গ্রামের এলজিইডি সেতু, মাছের পুকুর এবং কোটি কোটি টাকার বাগানও নদীতে বিলীন হয়েছে।
বহরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন এখন নদী থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে। যে কোনো সময় এটি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ভাঙন রোধে স্থানীয়রা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বহুবার আবেদন জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০২৩ সালে চারটি গ্রামের ১৫-২০টি বাড়ি নদীতে চলে যায়, কিন্তু পাউবোর পক্ষ থেকে প্রতিরোধক কাজ হিসেবে আপৎকালীন কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল, যা শুধু সাময়িক ব্যবস্থা ছিল।
বহরমপুর গ্রামের বাসিন্দা রহমান মৃধা বলেন, “একশ বিঘা জমি ছিল, সবই নদীতে চলে গেছে। এখন কোনো জায়গা নেই, রাস্তায় বসে আছি।”
এ বিষয়ে মগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মাসুম লস্কর শাহাজাদা বলেন, “ভাঙন রোধে সংবাদপত্রে বহু প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও সরকারি কোনো সংস্থা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা বহরমপুর মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসক এবং পাউবোকে লিখিতভাবে জানানো হবে এবং ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হবে।
জেলা পাউবো প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা জানিয়েছেন, টেকসই নদীরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুগন্ধা নদীর চারটি স্থানে নদীরক্ষা কাজের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং চলতি বছর কাজ শুরু হবে। কাজগুলো শেষ হলেই এই এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম