শিরোনাম

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা-বরিশাল নৌপথ

Views: 68

বরিশাল অফিস:: দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম নৌপথ। সেই রুটে অসংখ্যস্থানে ডুবোচর আর নাব্য সংকটের কারণে যাত্রী ও মালবাহী নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে প্রতিবছর বিভিন্নস্থানে ড্রেজিং করলেও সুফল পাচ্ছে না নৌরুট ব্যবহারকারীরা। পদ্মা সেতু চালুর পর লোকসানে থাকা এই খাত আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

নৌযান চালকরা জানিয়েছেন, সাধারণত নদীতে লঞ্চ চলাচল করতে কমপক্ষে ৫ ফুট আর যাত্রীবাহী নৌযানের ক্ষেত্রে ৭ ফুট গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু বরিশাল-ঢাকা এবং বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের অনেকগুলো স্থানে ভাটায় পানির গভীরতা ৩/৪ ফুটে নেমে আসে। ফলে এ সমস্ত এলাকা পার হতে নৌযান চালকদের জোয়ারের অপেক্ষায় থাকতে হয়।

বিআইডব্লিউটিএ বলছে, লঞ্চ আর পণ্যবাহী নৌযান যাতায়াতে কমপক্ষে ১২ মিটার গভীরতা দরকার। যদিও বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলো ৮ মিটার গভীরতায় চলাচল করতে পারে। অথচ এই রুটের এমন কিছু নদীপথ রয়েছে যেখানে ভাটায় দুই মিটার গভীরতা বিরাজ করে। জোয়ারে পানি বাড়লেও তার ৪/৫ মিটারের বেশি নয়।

এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের মাস্টার আব্দুস শুক্কুর বলেন, বরিশাল রুটের লঞ্চগুলো চলাচল করতে নিম্নে ৮-১০ ফুট গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা কিছু কিছু স্থানে পাঁচ ফুটও পাই না। যে কারণে অনেক ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ চালাতে হয়।

তিনি বলেন, প্রতিবছরই এই রুটের কোনো না কোনো স্থানে ড্রেজিং করে বিআইডব্লিউটিএ। তারা ড্রেজিং করে নদীর বালু নদীতেই ফেলে। যে কারণে কয়েক মাসের মধ্যে পুনরায় নাব্য সংকট তৈরি হয়। ড্রেজিংয়ের কোনো সুফল আমরা পাই না।

এমভি সুন্দরবন ১১ লঞ্চের মাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, বরিশাল থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত অন্তত ছয়টি স্থানে ঝুঁকি নিয়ে আমরা লঞ্চ চালাই। বিশেষ করে চরশিবলী, নলবুনিয়া, বামনির চর, হিজলা ও মল্লিকপুর চ্যানেলটি সহজ পথ থাকলেও চ্যানেলের বিভিন্নস্থানে চর জেগে তা বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব স্থানে চর পরে গেছে তা বিআইডব্লিউটিএ জানেন। আমরা চাই ঢাকা-বরিশাল রুটটি বাঁচিয়ে রাখতে স্থায়ীভাবে পরিকল্পনা করে খনন করা হোক।

বরিশাল পাতারহাট, ভোলা, ইলিশা, মজু চৌধুরীর হাট রুটের লঞ্চ চালক সেলিম, আকবর ও রায়হান জানান, শুকনা মৌসুমে নদীতে লগি ফেলে নদীর গভীরতা মাপতে মাপতে যেতে হয়। আসলে পদ্মা সেতু চালুর পর নৌরুটে যাত্রী কমে যাওয়ায় এই রুট ঠিক করতে সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

নৌযান চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল ও বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে কমপক্ষে ১৮টি স্থানে বড় ধরনের ডুবোচর দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বাউশিয়া-নলবুনিয়া চ্যানেলে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে, বরিশালের শায়েস্তাবাদ সংলগ্ন কীর্তনখোলা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর মোহনা, হিজলা থেকে বাবুগঞ্জ পযর্ন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় কয়েকটি ডুবোচর, মেহেন্দিগঞ্জর উলানিয়া থেকে শেওড়া পযর্ন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় কয়েকটি, হিজলার গ্রীন বিকন এলাকা, মেহেন্দিগঞ্জের কাটাখালি চ্যানেলের ১নং লাল বয়া ও ২নং স্পারিক্যাল বয়া এলাকায় নাব্য সংকট চরমে। নাব্য সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ আছে ঢাকা-বরিশাল রুটের মিয়ার চর চ্যানেল।

অভ্যন্তরীণ রুটের মধ্যে ভোলার ভেদুরিয়া, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কারখানা নদী, কবাই ইউনিয়নের পান্ডব নদী, লাহারহাট ফেরিঘাট এবং মেহেন্দীগঞ্জের ভাসানচর, কালিগঞ্জ, পটুয়াখালীর লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকায় পানি কম রয়েছে। বরগুনার খাকদন ও বিষখালী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর ও নাব্য সংকট থাকায় নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী সাইদুর রহমান বলেন, ড্রেজিং করার পরে দুই-চারমাস নির্বিঘ্নে নৌযান চলাচল করতে পারে। এরপর আবারও আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ডুবোচরের কারণে ভাটায় বড় লঞ্চগুলো চলাচল করতে পারে না। এজন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।

বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজার বেইজ বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক ) আবদুর রাজ্জাক মিয়া বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যে যে পয়েন্টগুলোতে ডুবোচর, নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে ওই পয়েন্টগুলো রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পের আওতায় খনন করা হবে। এই রুট থেকে রুপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল পরিবহন করা হবে। মালামাল পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে ওই প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং হবে। এতে সমস্যার সমাধান হবে বলেও আশা করেন এই কর্মকর্তা।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *