পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর দশমিনায় ট্রাক ড্রাইভার আল-আমিন (৩৩) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় ছিনতাইকৃত ৯ টন রড উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে বাউফলের দাসপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে একতা এন্টারপ্রাইজের গোডাউন থেকে রডগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
একতা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মাসুদ রানা রডগুলো আত্মগোপনে থাকা ট্রাকের হেলপার হাসানের কাছ থেকে ক্রয় করেছিলেন বলে জানা যায়। ছিনতাইকৃত রড ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যম করেন দশমিনার মজিবর নামের এক ঠিকাদার।
আরো পড়ুন : বৃষ্টির কামনায় পটুয়াখালী ইসতিসকার নামাজ আদায়
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১৭ তারিখ চট্টগ্রামের আবুল খায়ের ইন্ডাট্রিজ এর কারাখানা থেকে ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-৫১৩৮ নম্বরের ট্রাকটি ১৩ মেট্রিক টন রড নিয়ে বাউফলের কালিশুরী বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পরের দিন ১৮ এপ্রিল কালিশুরীর খান এন্টারপ্রাইজে রডগুলো আনলোড করার কথা। ১৮ এপ্রিল ট্রাকের ড্রাইভার আল আমিনকে ফোন করে বন্ধ পান তার মামা মো. সবুজ।
পরে ২০ এপ্রিল দশমিনার নদীতে দুহাত বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা পরিচয়ের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে দশমিনা নৌ পুলিশ। পরে মামা সবুজ খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন ওই মরদেহ তার ভাগ্নে আল আমিনের। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরের দিন চাঁদপুরে নিয়ে দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারে দশমিনা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আল-আমিনের মামা সবুজ। এরপরই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশের একাধিক টিম।
এদিকে দাশপাড়া বাস স্ট্যান্ডের কাছে একতা এন্টারপ্রাইজের গুদাম থেকে ছিনতাই হওয়া রড জব্দ করা হলেও রহস্যজনক কারণে মালিক মাসুদ রানাকে আটক করে পুলিশ। তবে পুলিশ ওই এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার নান্নু (৪৫), কর্মচারী দিলিপ (৫০) ও শাহাদুলকে (৪০) এবং দশমিনা থেকে মজিবর নামের এক ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
আল আমিন হত্যাকান্ডের মূল নায়ক আত্মগোপনে থাকা ট্রাকের হেলপার হাসানকে আটকের জন্য অভিযান চলছে। এদিকে রড পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাকটি পুলিশ বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া বাহাদুরপুর এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
আল আমিনের মামা সবুজ বলেন, ছোটবেলায় আল আমিনের বাবা মা মারা যান। এরপর থেকে আমার কাছেই বড় হন আল আমিন। আমার এতিম ভাগ্নেকে নির্মমভাবে খুন করা হলো। আমি খুনিদের উপযুক্ত বিচার চাই।
এদিকে কালাইয়া গুদাম থেকে ছিনতাই হওয়া রড জব্দ করা হলেও রহস্যজনক কারণে একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানাকে আটক করেনি পুলিশ।
আরো পড়ুন : তীব্র তাপদহে বিপর্যস্ত উপকূলের জনজীবন
ছিনতাইকৃত রড ক্রয়ের ব্যাপারে মাসুদ রানা বলেন, আমি মজিবর নামের এক ঠিকাদারের কাছ থেকে রডগুলো ক্রয় করেছি। তিনি (মজিবর) আমার পূর্ব পরিচিত। রডগুলো ছিনতাইকৃত কিনা তা আমার জানা ছিল না। আল আমিন হত্যাকাণ্ডের বিষয় আমি কিছুই জানি না। আমি নির্দোষ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দশমিনা নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন বলেন, ট্রাকের ড্রাইভার আল আমিনকে খুন করে ঘাতকরা রডগুলো কালাইয়া বাজারের একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানার কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করে দেয়। মাসুদ রানা ওই রডগুলো গুদামে রেখে দেন। তদন্তের একপর্যায়ে নিশ্চিত হয়েই রডগুলো মঙ্গলবার রাতে ওই গুদাম থেকে জব্দ করা হয়।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন বলেন, বিষয়টি দশমিনা থানার, রড উদ্ধারের সময় আমরা সহযোগিতা করেছি মাত্র। এর বাইরে আর কিছুই বলতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো.সাইদুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। তদন্তে যারা অপরাধী প্রমাণিত হবে তাদের প্রত্যেকেই আইনের আওতায় আনা হবে।