শিরোনাম

তাপদাহে অসহনীয় পটুয়াখালীর জনজীবন

Views: 79

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: বৈশাখের তপ্ত তাপদাহে দক্ষিণের জনপদের মাঠঘাট ফেটে চৌচির। শুকিয়ে গেছে পুকুর জলাশয়। প্রচণ্ড গরম ও পানির সংকটে অসহনীয় হয়ে উঠেছে মানুষ ও পশুপাখির জীবন। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সেচের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে আউশ ও বোরো আবাদ। দিশেহারা পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ জনপদের কৃষক।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ৪৫ দশমিক ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৮ মিলিমিটার, ফেব্রুয়ারিতে ১৬ মিলিমিটার, মার্চে ১০ দশমিক ৮ মিলিমিটার এবং ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ২০২৩ সালে জানুয়ারি-এপ্রিল জেলায় ৯৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। গতকাল রোববার পটুয়াখালীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আরো পড়ুন : দশমিনায় নদীতে ভেসে আসা যুবকের পরিচয় সনাক্ত

পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টা আবহাওয়ার এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও তাতে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান এ কর্মকর্তা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৮ থেকে ৩৪ ফুট নিচে নেমে গেছে। এর মধ্যে বদরপুরে ৩৪ ফুট, ইটবাড়িয়ায় ৩০ ফুট, কালিকাপুরে ২৯ দশমিক ৬ ফুট, মাদারবুনিয়ায় ২৯ ফুট, জৈনকাঠিতে ২৮ দশমিক ৭ ফুট এবং লাউকাঠিতে ২৮ ফুট নিচে রয়েছে পানির স্তর। একই অবস্থা জেলার অন্যান্য ইউনিয়নেরও। এ অবস্থায় পটুয়াখালীসহ পুরো দক্ষিণ জনপদের অনেক গভীর নলকূপে পানি উঠছে না । এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

পটুয়াখালীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক ভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক নলকূপে পানি উঠছে না। সাধারণত ৬ নম্বর হ্যান্ডপাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ বসানোর জন্য পানির সর্বোচ্চ স্থিতিতল হয় ২০ থেকে ২৫ ফুট। কিন্তু সদর উপজেলায় পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেছে। এতে নলকূপগুলোর হাতল শক্ত হয়ে পানির ডিসচার্জ কমে যায়। কিছু কিছু নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। পানির সংকট নিরসনে সাবমার্সিবল পাম্প বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন : পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালে একসঙ্গে ভিড়বে তিন জাহাজ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৬১০ হেক্টর। এর মধ্যে স্থানীয় জাতের ২৪১ হেক্টর, উফশী জাতের ১৫ হাজার ৫৫৯ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। কিন্তু অনাবৃষ্টি ও সেচের অভাবে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকদের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রচণ্ড তাপদাহে মাঠঘাট ফেটে চৌচির হওয়ায় আবাদ করা মুগ ডাল, তিল, চিনাবাদাম, কাঁচামরিচ, সূর্যমুখী, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, খরা ও অনাবৃষ্টিতে রবিশস্যের তেমন ক্ষতি না হলেও বোরো আবাদে ক্ষতির শঙ্কা প্রবল। কৃষকরা জমিতে দুই থেকে তিন দিন পানি ধরে রাখতে পারলে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। ফসল রক্ষায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *