শিরোনাম

তীব্র দাবদাহে শরীরে দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা

Views: 90

বরিশাল অফিস :: চলমান তীব্র দাবদাহে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই বেশ কিছু এলাকায় আগাম রোপিত বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন অসহনীয় গরমের মধ্যে কাজ করা দিনমজুররা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছেন। ঘামের সাথে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি বের হওয়ার পর সেই ঘাটতি পূরণ না হওয়ায় অনেকের শরীরে দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা। প্রচন্ড দাবদাহের কারণে ডায়রিয়া, বমি ও জ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব রোগীদের শরীরেও দেখা দিয়েছে পানির ঘাটতি। অনেক সময় অতিরিক্ত শরীরচর্চার কারণেও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ মোঃ মাহাবুব আলম মির্জার মতে, শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে পানির পাশাপাশি খনিজ পদার্থেরও ঘাটতি হয়। তাই এ সময় ডাব ও স্যালাইন পান করতে পারেন। আবার পটাশিয়ামের অভাব পূরণের জন্য নিয়মিত পাকা কলাও খেতে পারেন। তবে এড়িয়ে চলতে হবে কফি খাওয়া। অতিরিক্ত কফি শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে। তাই গরমে কফি ও তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তবে বেশ কিছু ফল রয়েছে, যা আপনার শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম।

লেবু ॥ গরমে প্রশান্তি পেতে কমবেশি সবাই লেবুর শরবত পান করেন। ভিটামিন সি যুক্ত এই ফলের রস আপনাকে সতেজ অনুভূতি দেবে সারাদিন। তবে লেবুর শরবতে খুব বেশি চিনি মেশাবেন না। লেবুতে থাকা পটাশিয়াম শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ঘামের কারণে শরীরে খনিজের যে ঘাটতি তৈরি হয়, তার অনেকটাই পূরণ করে লেবু। লেবুর প্রায় ৮৮ শতাংশই পানি।

তরমুজ ॥ গ্রীস্মকালীন ফল তরমুজ। বাজারে বেশ সহজলভ্য ফলটি। গরমে একটু স্বস্তি পেতে খেতে পারেন এই ফল। এটি শরীরে জলের অভাব পূরণ করে। তরমুজে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি পানি থাকে। ফলে পানিশূন্যতারোধে এটি হতে পারে একটি উপকারী খাবার। সাথে রয়েছে-ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট লাইকোপিন ও ম্যাগনেসিয়াম। যা তীব্র গরমেও আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। তরমুজ ফ্রিজে রেখেও খেতে পারেন। তবে তরমুজ খাওয়ার পরপরই পানি পান করবেন না।

টমেটো ॥ টমেটো এখন প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায়। টমেটো রান্না কিংবা কাঁচা, যেভাবেই খাবেন তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। তবে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় কাঁচা টমেটো খেলে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন সি, ক্রোমিয়াম, ফোলেট, ফাইবার, পটাশিয়াম ও ফাইটোকেমিক্যালের উপকারী পুষ্টি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত টমেটো খেলে ক্যান্সার, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

শসা ॥ গরমের আরেকটি সেরা ফল হল শসা। এটি পানিশূন্যতারোধ করতে সাহায্য করে। শসায় রয়েছে ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। শসার প্রায় ৯৫ শতাংশই পানি। এই ফলের সবচেয়ে উপকারী গুণ হলো, এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। নিয়মিত শসা খেলে দূর হয় শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ। এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিসকার রাখে। শসা খেলে গরমে শরীর ঠান্ডা থাকে।

ডাব ॥ শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে এবং ইলেক্ট্রলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে ডাবের পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই প্রতিদিন ডাব ক্রয় করে খাওয়া প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। সেক্ষেত্রে তারা বিকল্প হিসেবে স্যালাইন পানি পান করতে পারেন।

ডাঃ শাহনাজ রুবি’র মতে, গরমের সময় ভারি খাওয়ার পর ডিটক্স পানি পানি করা যেতে পারে। ডিটক্স ওয়াটার হলো-পানি, লেবুর রস, শশা, গাজর, পুদিনা ইত্যাদির রসের সমন্বয়ে তৈরি একধরনের পানিয়। এ ছাড়া মশলা জাতীয় ভারি খাবার খেতে ভালো লাগলেও গরমের সময় কম মশলা জাতীয় খাবারের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ এগুলো সহজে হজমযোগ্য। বাজারে এখন ঝিঙ্গা, চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, সজনেডাঁটা, শাকের ডাঁটা ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোকে যদি পাতলা ঝোল করে রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা জোগাবে, অপরদিকে শরীরে গরম অনুভব কম হবে।

গরমে নিরাপদ পানি পানের কোন বিকল্প নেই জানিয়ে ডাঃ মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গরমের সময় ঘাম ও প্রসাবের সাথে শরীর থেকে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম বের হয়ে যায়। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার বা ১২ থেকে ১৩ গ্লাস পানি পান করা উচিৎ। পাশাপাশি এখন দেশের সর্বত্রই কাঁচা আম পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা আমের মাঝে ভিটামিন-সি থাকে। কাঁচা আমের সাথে মরিচ যুক্ত না করে যদি এটিকে শরবত হিসেবে খাওয়া যায় তাহলে গরম কম অনুভব হবে। এ ছাড়া প্রচন্ড গরমে পাকস্থলীকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন টকদই খাওয়া যেতে পারে।

প্রতিদিন বাড়ছে তাপমাত্রা। বাড়ছে গরম। এ সময় পিপাসায় গলা শুকিয়ে যায়। পানির চাহিদা বেশি থাকে। তাই নরমাল পানির চেয়ে ফ্রিজের পানির প্রতি চাহিদা বেশি থাকে। পাওয়া মাত্রই খাওয়া শুরু করে দেন অনেকেই কিন্তু এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর জানিয়ে ডাঃ কাজী শিউলী বলেন, রোদ থেকে ঘুরে এসে ঢক ঢক করে ঠান্ডা পানি খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়। এতে সাময়িক আরাম পাওয়া গেলেও শরীরের উপর এর বিরূপ প্রভাব পরে। হঠাৎ করে শরীরে ঠান্ডা পানি প্রবেশ করার ফলে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পরে। বিশেষ করে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *