শিরোনাম

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ২৬১

Views: 167

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২১টি নির্বাচনী এলাকায় দলীয় মনোনয়ন চাইছেন ২৬১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১৪ জন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন।  আর বিএনপির ৮২ জন। এ দুই দলের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়নের আশায় মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির ৩২ এবং ইসলামী আন্দোলনের ৩৩ জন নেতা। অবশ্য এ সংখ্যা চূড়ান্ত নয় বলে দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। অবশ্য নির্বাচনের দিন-ক্ষণ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে আমাদের বরিশাল প্রতিনিধি এস এল টি তুহিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে থাকছে বরিশাল ৫ আসনের হালচাল।

বরিশালে আসন: মাঠ গোছাচ্ছে আওয়ামীলীগ, আন্দোলনে বাস্ত বিএনপি

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে বরিশাল-৫ আসন। তাই এ আসনের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এই আসনকে নিয়েই যত জল্পনা- কল্পনা। এই আসনের এমপি হতে বাঘা বাঘা প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

অতীতের নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়। এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। এই আসন থেকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা এছাড়া এই আসন থেকে বিএনপির নির্বাচত এমপি আব্দুর রহমান বিশ্বাস হয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

এছাড়া এই আসন থেকে চার বার নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার। তিনিও ছিলেন বরিশাল জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। এছাড়া জাতীয় সংসদের হুইপ ছিলেন তিনি। একই আসন থেকে বিএনপির নাসিম বিশ্বাস নির্বাচিত হয়েছেন দুইবার।

তাই এই আসনটিকে বিএনপির ঘাঁটি বলা হয়। অপরদিকে এই আসনটি বিএনপির হাত থেকে উদ্ধার করেন প্রায়ত আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরণ। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। এরপর তার অকাল মৃত্যুতে আসনটিতে তার স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ নির্বাচিত হন।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আসার সম্ভাব্য প্রার্থীরাও জানান দিচ্ছেন তাদের প্রার্থিতা।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, সদ্য সাবেক সিটি মেয়র ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তিনি এ আসনে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। সাদিক আব্দুল্লাহর অনেক কর্মীরা জানিয়েছেন সাদিক প্রার্থী হচ্ছেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতরাও তার জন্য দলীয় মনোনয়ন চাইবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তাছাড়া সাদিক আব্দুল্লাহ সদর উপজেলার চরকাউয়াসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও সভা-সমাবেশ করেছেন।

মনোনয়ন চাইবেন এই আসনের বর্তমান এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। ক্লিন ইমেজের এই নেতা এবারও চাইবেন নৌকার মনোনয়ন। এছাড়া বরিশাল-৫ আসনের সাবেক এমপি নগর আওয়ামী লীগ সহ- সভাপতি জেবুন্নেছা আফরোজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল।

লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চেম্বার সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, সালাহ উদ্দিন রিপন, আরিফিন মোল্লা, মশিউর রহমান খানও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

এ আসনটিতে বিএনপির মনোনায়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন— দলের যুগ্ম মহাসচিব চার বারের সাবেক এমপি ও সাবেক সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি এই আসন থেকে প্রায় ২৪ বছর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই আসনটি বিএনপি ঘাঁটিতে পরিণত হয়। মনোনয়ন চাইবেন দলের অপর যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি এর আগে বরিশাল ২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

এবার এই আসনে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন। তিনি সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি। এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম খান রাজন। তিনি লবিং করছেন সরাসরি লন্ডন থেকে। বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক মনোনয়ন চাইবেন। তিনি নগর বিএনপির দায়িত্বে আসার পর থেকে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করেছেন। এছাড়া বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়দুল হক চান এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আৰু কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৪টি।

নাসের মো. রহমতউল্লাহ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন নান্নু, নগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কেএম মর্তুজা আবেদীন, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি ফয়জুল করিম, ইউনাইটেড কমিনিউস্ট লীগের সেক্রেটারি আব্দুস সত্তার প্রার্থী হতে পারেন।

দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নের ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলাপরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর  বলেন, সদর আসনের জন্য জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠাবেন। তবে কাকে এই আসনটিতে প্রার্থী দেয়া হতে পারে তা  একমাত্র দলীয় প্রধান ভালো জানেন।

অপরদিকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আমরা মাঠে আছি। দাবি বাস্তবায়ন হলে আর দল যদি নির্বাচনে যায় তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ নেব। তবে সব কথার এক কথা বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। ফলে ভোটার সংখ্যা আগের থেকে আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান তালিকা অনুযায়ী বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৭৯ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫১ জন। এ আসনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৪ টি।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *