বরিশাল অফিস :: বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েকদিনের শীতের দাপটে ঠান্ডাজনিত নানা সংক্রমক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। বছরজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে ডেঙ্গু অনেকটা নিয়ন্ত্রনে এলেও মৃত্যুর মিছিল থামছে না। শনিবার দুপুরেও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর।
এনিয়ে শুধু সরকারি হাপসাতালে ২১৪ জনের মৃতুর সাথে আক্রান্তের সংখ্যাও সাড়ে ৩৮ হাজারে পৌঁছল। নতুন করে করোনার চোখ রাঙানি উদ্বেগ তৈরী করলেও টেষ্ট কিটের অভাবে এ অঞ্চলের কোথাও কোভিড পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ভোলা জেনারেল হাসপাতালে দুটি পূর্ণাঙ্গ ‘করোনা টেষ্ট ল্যাব’ থাকলেও জনবল প্রায় শূনের কোটায়। এছাড়া প্রতিটি উপজেলা সদরেও কোভিড-১৯’এর প্রাথমিক শনাক্তের সুবিধা থাকলেও কীটের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও এখন আর করোনা শনাক্তের ব্যবস্থা নেই। এমনকি এ অঞ্চলে করোনা প্রতিরোধি ভ্যাকসিন এর ৩ ডোজ গ্রহণের হার এখনো ৬০ ভাগের নিচে। গত প্রায় ৬মাস ধরে ভ্যাকসিন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
তবে খুব দ্রুত টেষ্টকীট সরবরাহ সহ জনবল নিয়োগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জরুরী বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে বরিশালের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানিয়েছেন। বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডলের মতে ‘টেষ্ট কীট পাওয়া গেলে আমরা প্রতিটি উপজেলা পর্যায়েও কোভিড রোগী শনাক্তে পরীক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
২০২৩ সালে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা প্রায় নিয়ন্ত্রনেই ছিল। ২০২২ এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অঞ্চলে শনাক্ত ৫৫ হাজার করোনা রোগীর মধ্যে ৬৯৩ জনের মৃত্যু হয়। যারমধ্যে বরিশাল মহানগরীতেই দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। পুরো করোনাকালীন সময়ে এ নগরী ছিল কোভিডের আতুর ঘর। আক্রান্তের শীর্ষেও ছিল এ মহানগরী।
করোনার মত ডায়রিয়া সহ ঠান্ডাজনিত সব রোগীর শীর্ষে বরিশাল মহানগরী। এরপরেই দ্বীপজেলা ভোলার অবস্থান।
গত বছর প্রায় ৭২ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা গ্রহণের পরে নতুন বছরের প্রথম ২০ দিনেও আরো প্রায় আড়াই হাজার এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। প্রতিদিনই গড়ে শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া নিয়ে সরকারি হাসপাতালে এলেও বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা এর তিনগুনেরও বেশী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসদের মতে, এখন মুমূর্ষু অবস্থায় না পৌঁছলে কেউ সরকারি হাসপাতালের স্মরণাপন্ন হয়না। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, গত বছর দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি হাসপাতাল সমূহে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭২ হাজার। যা ২০২২ সালে ছিল ৭৮ হাজারের মত এবং ২০২১ সালে ৭৭ হাজারের কিছু বেশী।
এদিকে শীতের শুরু থেকেই এ অঞ্চলে নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগের প্রকোপও ক্রমশ বাড়ছে। সদ্য সমাপ্ত বছরে এ ধরনের ৭৭ হাজারেরও বেশী রোগী বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এলেও নতুন বছরের গত ২০ দিনে আরো প্রায় আড়াই হাজার রোগী ঠান্ডাজনিত নানা উপসর্গ নিয়ে সরকারি হাসপাতালে এসেছেন। এদের মধ্যে মৃত্যুও হয়েছে ১ জনের। গত বছর সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে ১৫ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। আর গত ১ মাসে শুধু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রায় দেড় হাজার রোগী সরকারি হাসপাতালে এসেছে বলে জানা গেছে। তবে এসব ক্ষেত্রে আরো অন্তত তিনগুন রোগী বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক ও চিকিৎকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো সরকারি হাসপাতালের শিশু এবং মেডিসিন ওয়ার্ডগুলো নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের ভীড়ে ঠাসা। দক্ষিণাঞ্চঞ্চেলের সর্ববৃহৎ সরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান, শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মাত্র ৩৬ শয্যার শিশু বিভাগে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগী সহ পৌনে ৩শ শিশু চিকিৎসাধীন থাকছে। অনুমোদিত ১ হাজার শয্যার এ হাসপাতালে শিশু বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত বেড সংখ্যা এখনো মাত্র ৩৬। যার মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে। ১ হাজার শয্যার বিশাল এ হাসপাতালে শিশু বিভাগের জন্য স্বল্পসংখ্যক বেড নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
এদিকে শনিবার শেষরাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত মেঘনা অববাহিকা সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল ঘন কুয়শায় ঢেকে ছিল। সকালে তাপমাত্রার পারদ ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রীর মধ্যে থাকলেও আগামী তিনদিনে শীতের তীব্রতা আবারো বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।