শিরোনাম

দেশীয় মাছের সংকটে দক্ষিণাঞ্চল, বিলুপ্তির পথে ৫ প্রজাতি

Views: 20

দক্ষিণাঞ্চলের নদী, খাল, বিল ও জলাশয়ে বিলুপ্তির পথে রয়েছে দেশের প্রাচীন দেশীয় প্রজাতির কয়েকটি মাছ। এসব মাছ এক সময় এই অঞ্চলের মাছ শিকারিদের জীবিকার উৎস ছিল, তবে আজকাল তারা খুবই বিরল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে “ভেদা” বা “রয়না” মাছ, যা এক সময় স্থানীয়দের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ছিল, এখন খুবই কম পাওয়া যায়।

নদী ও জলাশয় প্রধান বরিশাল বিভাগের নদী-নালায় ১৫ বছর আগে পর্যন্ত প্রচুর ভেদা মাছ পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে তা বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় মৎস্য শিকারিরা হতাশ হয়ে বলছেন, এক সময় নদী-খালে ছোট-খাটো মাছ শিকার করলেই পাওয়া যেত নানা দেশীয় প্রজাতির মাছ, কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থা আর নেই। মৎস্য অধিদপ্তরও জানাচ্ছে, ভেদা ছাড়াও রয়না, সরপুটি, বাইম, তারা বাইম এবং পাবদা মাছ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।

এমনকি এসব মাছের অস্তিত্ব হারানোর সাথে সাথে এসব মাছের স্বাদও এখন অনেকটাই কমে গেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, আগে যারা মাছ শিকার করতেন, তারা এখন বাজারে চাষের মাছই বেশি খাচ্ছেন। বরিশাল শহরের বিভিন্ন মাছ বাজারে, যেমন পোর্ট রোড, নথুল্লাবাদ ও বাংলাবাজারে মাছের মধ্যে দেশীয় মাছের পরিমাণ খুবই কম। এসব বাজারে এখন মূলত চাষের মাছই দেখা যায়, যেমন পাঙাশ, কোরাল, শিং, মাগুর এবং শুঁটকি মাছ।

প্রতিবেশী নরেশ শীল বলেন, “পূর্বে আমাদের গ্রামে ঝলমল নদী ছিল, যেখানে মাছ শিকার করা খুব সহজ ছিল। এখন আর সেভাবে মাছ পাওয়া যায় না।” অন্যান্য মৎস্য ব্যবসায়ীও একই রকম হতাশা প্রকাশ করেছেন, তবে তারা বলেন, চাষের মাছের অভাব নেই, কিন্তু দেশীয় প্রজাতির মাছ এখন প্রায় অদৃশ্য।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার। মৎস্য বিশেষজ্ঞ ড. মো. জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, “যতটা কীটনাশক কৃষকরা ফসলের ক্ষেতেয ব্যবহার করেন, তাতে মাছের প্রজননস্থানে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, যা মাছের জীববৈচিত্র্য হ্রাস করছে।”

এছাড়া নদী ও জলাশয়ের নাব্যতা হারানো এবং অবৈধ পন্থায় মৎস্য আহরণও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট পটুয়াখালী উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশরাফুল হক জানান, “দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, তবে মূলত জলাশয়ের সংকোচন এবং কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাবই এর প্রধান কারণ।”

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে দেশীয় মাছের সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, এই উদ্যোগের প্রভাব এখনও স্পষ্ট নয়। উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানিয়েছেন, “এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ, তবে এখনও মাছের প্রজাতির হারানোর সংখ্যা বা পরিমাণ পর্যালোচনা করা হয়নি।”

দক্ষিণাঞ্চলে দেশের ঐতিহ্যবাহী দেশীয় মাছের বিলুপ্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে। দেশীয় মাছের উত্পাদন কমে যাওয়ার কারণে শুধু মানুষের খাদ্যাভ্যাসই পরিবর্তিত হচ্ছে না, বরং এর সাথে স্থানীয় মৎস শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এই মাছগুলো একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *