শিরোনাম

দখল-দূষণে ছোট হয়ে আসছে কীর্তনখোলার মানচিত্র

Views: 39

বরিশাল অফিস :: ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর মানচিত্র। ৫ হাজারেরও বেশি ভূমিদস্যু ও দখলদারের দখলে নদীটি। পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এই দখল ও দূষণ হলেও, প্রতিরোধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

বরিশাল সদর উপজেলার চর আইচা এলাকায় বাঁশের বেড়া দিয়ে, বালু ফেলে দখল করা হচ্ছে কীর্তনখোলা নদী। পাশেই দখল করা জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যে যেভাবে পারছে দখল করছে।

শুধু চর আইচা এলাকায় নয়। বরিশাল নগরী ঘেঁষা ধান গবেষণা রোড, বেলতলা, পলাশপুর এলাকাজুড়ে চলছে কীর্তনখোলা নদী ভরাট ও দখলের মহোৎসব। আর দখলদাররা বলছেন, এসব জমির কাগজপত্র ‍আছে তাদের কাছে। কিন্তু কাগজপত্র দেখতে চাইলে দেখাতে পারেননি।

দখলদারদের দাবি, নদীর পাড়ে যেসব জমি তারা দখল করেছেন তার অধিকাংশের দলিল আছে তাদের কাছে। কারোর দাবি, নদী ভাঙনের আগে নদীর যেসব জায়গায় তাদের জমি ছিলো সেই দাগ হিসেব করে ভরাট করেছেন তারা। তাতে নদী দখল হয়নি বলে দাবি তাদের।

স্থানীয়রা বলছেন, নদীর সাথে সংযোগ দেয়া স্যুয়ারেজ লাইনের ময়লা আবর্জনার স্তূপকে ঘিরে প্রতিনিয়তই বিষাক্ত হয়ে উঠছে নদীর পানি। আর কীর্তনখোলা দিন দিন সরু হচ্ছে।

আরিফ নামে এক বাসিন্দা জানান, গত কয়েক বছর ধরে যে যেখান থেকে পেরেছে কীর্তনখোলা দখল করেছে। এছাড়া সুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমে সব ময়লা আবর্জনা এসে নদীতে পড়ছে। সব মিলিয়ে একাকার অবস্থা কীর্তনখোলার।

সুজন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা অনেকবার আন্দোলন করলেও দখলদারদের হাত থেকে কীর্তনখোলাকে মুক্ত করতে পারিনি। প্রতিবারই তারা প্রভাব খাটিয়ে এ নদীকে যেভাবে পেরেছে দখল করেছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বরিশালের তথ্য বলছে, গত ৪০ বছরে কীর্তনখোলা নদীর দুপাড় দখল করেছে প্রায় ৫ হাজার ১৯২ জন প্রভাবশালী দখলদার।

পরিবেশবিদ আহসান মুরাদ বাপ্পি বলেন, সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ আছে তাদের এখনই সময় কীর্তনখোলা নদীকে দখলমুক্ত করার। এখনই যদি তারা পদক্ষেপ না নেন তাহলে ভবিষ্যতে আরো খারাপ হবে।

বিআইডব্লিউটিএ বলছে, দখলদারদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ প্রায় শেষ। আর দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি জেলা প্রশাসকের।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন উর রশিদ বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে নদীর বিভিন্ন জায়গা পর্যবেক্ষণ করে আমরা দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করেছি। যাদেরই অবৈধ স্থাপনা তালিকায় আছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন,‘বিআইডব্লিউটিএ’র সাথে সমন্বয় করে দ্রুতই দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারাই নদী দখল করেছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যত প্রভাবশালী হোক না কেন যার যার অবৈধ স্থাপনা আছে সবারটা উচ্ছেদ করা হবে।’

সবশেষ ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ৬০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নদী দখলের তালিকা প্রস্তুত জানিয়ে বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও, অদৃশ্য শক্তির জোরে শক্তপোক্তভাবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় না বলে অভিযোগ নদী গবেষকদের।

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *