শিরোনাম

দখিনের সড়কে মৃত্যুর মিছিল: শুধু ফোরলেন নয়, চালকদের বিষয়ে কঠোর হবার দাবী সাধারণ মানুষের

Views: 54

বরিশাল অফিস :: সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না বরং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ঈদের দু’দিন আগে থেকে এই মুহূর্তে বরিশালের ঝালকাঠির গাবখান ব্রীজের টোলঘরের দূর্ঘটনাসহ শতাধিক প্রাণ ঝরে গেছে বলে জানালেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সংস্থার প্রধান মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ঈদের আগের দিন থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক দূর্ঘটনায় ৮৫ জনের মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ( ১৮ এপ্রিল) সড়ক দূর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরো বেড়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের অভিযোগ বেপরোয়া গাড়ি চালকদের চাস্তির আওতায় আনা হয়না বলেই এতো দূর্ঘটনা বাড়ছে বাংলাদেশে।

গতকাল বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় সিমেন্টবাহী একটি ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সেটি কয়েকটি গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে চলে যায়। এ সময় ট্রাকটির নিচে চাপা পড়া প্রাইভেট কার থেকে শিশুসহ ৭ আরোহীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন ইজিবাইকের ৪ যাত্রী। এই ঘটনায় মোট ১১ জনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আফরুজুল হক।

বুধবার দুপুর দেড়টায় ঘটে যাওয়া এই দূর্ঘটনায় আরো ১৫ জনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতদের মধ্য থেকে আরো ৩ জনের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন।
সংবাদ পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে এসে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। আর ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার দুপুর দেড়টায় গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় টোল দিতে অপেক্ষায় ছিলো ৩টি অটো গাড়ি, একটি প্রাইভেটকার ও একটি পিকআপ। হঠাৎ করে একটি বালুবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে অটোগাড়ি পরে প্রাইভেটকার ও ট্রাককে আঘাত করে। এতে মুহুর্তে ঘটনাস্থলে পথচারি সহ নিহত হয় ১১ জন। আহতদের ১৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে মৃত্যু হয় আরও ৩ জনের। এদের মধ্যে বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছিলেন কয়েকজন।


নিহতদের বেশিরভাগই ঝালকাঠি জেলার। তাদের মধ্যে প্রাইভেকার চালক ইব্রাহিম, স্ত্রী তাহমিনা সহ ৭ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকীদের পরিচয় জানার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ছুটে এসে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট উদ্ধার কাজ শুরু করে। পাশাপাশি উদ্ধার অভিযানে নামে জেলা পুলিশ।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মোঃ বেলাল উদ্দিন বলেন, জনতার ভিড়ে উদ্ধার কাজে কিছুটা সমস্যা হলেও আমরা আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে পেরেছি। প্রাইভেট কার একদম দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। ভিতরে কেউ আটকা পরেনি তা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে নিহতের পরিবারকে ৫ লাখ ও পঙ্গুত্ব বরনকারী ব্যাক্তিদের ৩ লাখ ও আহতদের ১ লাখ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারহা গুল নিঝুম । পাশাপাশি ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর ঘাতক ট্রাক ও তার ড্রাইভারকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আফরুজুল হক।

এর আগে গত বছর ২২ জুলাই ঝালকাঠি সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় ইউপি ভবনের সামনে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে ১৩ জন নিহত হয়। এই দুর্ঘটনায় আরও ১৫ জন আহত হয়।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে বরিশালের বানারীপাড়ায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসের চাপায় নাছির উদ্দিন নামে এক মোটরসাইকেল চালক (৪০) নিহত হয়েছেন।
গৌরনদীতে ৯ এপ্রিল ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- উজিরপুর উপজেলার পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের হাবুল সরদারের ছেলে উজ্জল সরদার (৩২) ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদী গ্রামের মো. জালাল মিয়ার ছেলে মো. দ্বীন ইসলাম (২২)। ঝালকাঠির রাজাপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে মালবাহী নসিমন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাহাঙ্গীর (৫০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হন ৩ জন।

কলাপাড়া-পটুয়াখালী সড়কের টিয়াখালীর বিশকানিতে সিএনজি অটোরিকশা উলটে দুই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- বরগুনার বড়ইতলার আবজাল হোসেন (৬০) ও বেতাগী উপজেলার গাবতলীর জাকারিয়া (২৩)। ভান্ডারিয়া-কাঁঠালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে সোমবার বাস চাপায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত আবু তালুকদার উপজেলার দক্ষিণ কৈখালী গ্রামের ইসমাইল তালুকদারের ছেলে।

সর্বশেষ,বরিশাল- পটুয়াখালি মহাসড়কের বাকেরগঞ্জের রুহিতারপার নামক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাককে পেছন থেকে চলন্ত মোটরসাইকেল ট্রাককে ধাক্কা দিলে দুজন নিহত হয়। বুধবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৯ টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

দুর্ঘটনার পর মুমূর্ষু অবস্থায় দুই জনকে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগে চিকিৎসক মাহামুদুল হাসান দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতরা হলেন, বরিশাল সদর উপজেলার আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীনের পুত্র মনিরুজ্জামান কোম্পানি লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মনিরুজ্জামান (৬২) অপরজন হলেন বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়নের মৃত মজনু বাড়ি সিকদারে পুত্র ও আহসান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকার বদরুল আহসান সিকদার (৬০) পেশায় দুজনই ঠিকাদার।

পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ছুটে আসা গাড়ির চাপ যেমন বেড়েছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সড়কে মৃত্যুর পরিসংখ্যান। সাধারণ মানুষ ও নগর চিন্তাবিদদের প্রায় সকলেই একবাক্যে জানালেন, ফোরলেন যথেষ্ট নয়, সড়ক নিরাপদ রাখতে হলে গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ ও তাদের দক্ষতা যাচাই পক্রিয়া কঠিন করতে হবে। চালকের গাফিলতির কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী করেন সাধারণ যাত্রীসহ যাত্রী কল্যাণ সংস্থার নেতৃবৃন্দ।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *