পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু সাগরে কাক্সিক্ষত মাছ ধরা পড়ছে না। অন্যদিকে মৌসুম জুড়ে এবার সাগরের বৈরী আচরণ ছিল। গত দুই মাসে ছয় দফায় কখনো লঘুচাপ, কখনো নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। তাই যাত্রা করে গিয়ে জাল ফেলতে না ফেলতেই সাগর উত্তাল হওয়ায় তড়িঘড়ি ফিরে আসতে হয়েছে জেলেদের। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
এদিকে সামনে আসছে আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপকূলের জেলেদের দিন কাটছে হতাশায়।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে ভাগ্যক্রমে কিছু জেলে লাভবান হয়েছেন। বেশিরভাগ জেলে এবার ক্ষতিগ্রস্ত। মৌসুমের শেষ দিকে এসেও আশানুরূপ মাছ জালে উঠছে না। বড় ইলিশ পরিমাণে কম। ছোট ইলিশ আর জাটকা মিলছে, তাও অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশি নয়। বেশিরভাগ ধরা পড়ছে পোমা, লইট্টা, রূপচাঁদাসহ সামুদ্রিক অন্যান্য মাছ। এতে লাভ তো দূরের কথা, যাওয়া-আসার খরচও উঠছে না কারও কারও।
সাগর থেকে মাছ শিকার করে কোড়ালিয়া ঘাটে আসা কাশেম হাওলাদার বলেন, ‘সাগরে ঠিকভাবে মাছ ধরতে পারছি না। কয়েক দিন পরপর আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে। এমনিতেই সাগরে ইলিশের কোনো দেখা নেই। তিন দিন পর ঘাটে এসেছি। মাছ বিক্রি হবে ৫০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু ট্রলারের স্টাফদের বেতন আছে ৪০ হাজার টাকার মতো। খাওয়া-দাওয়া, আসা-যাওয়ার খরচ তো আছেই। তাই কোনো লাভ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে চলবে আমাদের জীবন!’
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, রাঙ্গাবালীতে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১৬ হাজার ৮০৯ জন। এ ছাড়া অনিবন্ধিত জেলে রয়েছেন প্রায় তিন হাজার।
রাঙ্গাবালী উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘এবার জেলেদের ভাগ্য সহায় হচ্ছে না। সাগরে বারবার বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরা।’
তিনি আরও জানান, সামনে আসছে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। মা ইলিশ রক্ষায় আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। ফলে এ বছর জেলেদের সংকটের মধ্যেই চলতে হবে।
এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ও মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ সাগরে মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। ইলিশই তাদের আয়ের অন্যতম উৎসব। দেখা যাচ্ছে, বিগত বছরগুলোয় আমাদের দেশে ইলিশ পরিমাণে কমে যাচ্ছে। উপকূলীয় মানুষের যে দুর্দশা তা কিন্তু কিছু মানুষের জন্য। কিছু অসাধু জেলে চরঘেরা, বেহুন্দিসহ নানা ধরনের অবৈধ জাল দিয়ে উপকূলকে ঘিরে রেখেছে। ফলে ইলিশের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কমছে তাদের প্রজননও। ফলে ভরা মৌসুমেও ইলিশ সেভাবে ধরা পড়ছে না। এর ওপর রয়েছে বৈরী আবহাওয়া। জ্বালানি তেল, রসদসহ যাবতীয় খরচ মিটিয়ে জেলেদের সাগরে যাত্রা করেও দ্রুত ফিরে আসতে হচ্ছে। এতে তারা আর্থিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এদিকে সামনে আসছে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তাই এবার জেলেদের রক্ষায় সরকারকে আগে থেকেই ভালো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’