সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা আমাদের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষত, যারা সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ২০১৫ সালে দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করা কর্মীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৩% বেশি ছিল, যারা সপ্তাহে ৩৫-৪০ ঘণ্টা কাজ করেন তাদের তুলনায়।
WHO’র সতর্কবার্তা
২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। WHO’র তথ্য অনুযায়ী, যারা সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৫% বেড়ে যায়। তাই দীর্ঘ সময় কাজ করার আগে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
দীর্ঘ কর্মঘণ্টার প্রভাব
দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে শারীরিক ও মানসিক চাপ তৈরি হয়, যা রক্তচাপ, প্রদাহ এবং সামগ্রিক কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। নিচে উল্লেখ করা হলো দীর্ঘ কর্মঘণ্টার প্রভাবগুলো যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
১. রক্তচাপ বৃদ্ধি
চাপযুক্ত পরিবেশে একটানা বসে কাজ করলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে, যা স্ট্রোকের মূল ঝুঁকিগুলোর একটি।
২. স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি
দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, যা কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই হরমোনগুলো রক্তনালীগুলোকে দুর্বল করে দেয় এবং ধমনীতে প্লাক তৈরি করে, যা রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. অলস জীবনযাপন
ডেস্ক জবের ফলে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে নড়াচড়ার অভাব হয়। এটি অলস জীবনযাপনের দিকে ঠেলে দেয়, যা রক্তসঞ্চালন হ্রাস, ওজন বৃদ্ধি এবং বিপাকীয় স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ হতে পারে। এসব সমস্যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ে।
৪. ঘুমের ঘাটতি
দীর্ঘ কর্মঘণ্টার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘুমের অভাব দেখা যায়। অপর্যাপ্ত ঘুম উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রদাহের কারণ হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও বাড়ায়। তাই সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত ও সঠিক ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
—