প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ভূমিসেবা ব্যবস্থাকে আরো সহজ এবং দ্রুততর করার জন্য সরকার সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন সফটওয়্যারটির মাধ্যমে পাঁচটি ভূমিসেবা একত্রিত করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। গত দেড় মাস ধরে দেশের বিভিন্ন ভূমি অফিসে এ সেবা বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, নতুন সফটওয়্যারের মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য সেবা আরও সহজ হবে। কিন্তু নতুন সফটওয়্যারের ধীরগতি এবং বিভিন্ন সুবিধা যুক্ত না থাকায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ভূমি মালিকরা নামজারি, খাজনা জমা দিতে পারছেন না। এছাড়া, লগইন আইডি না পাওয়ার কারণে ভূমি ও ফ্ল্যাট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোও একই সমস্যার মুখোমুখি।
সফটওয়্যারের আপগ্রেডেশন কার্যক্রমে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে, যার কারণে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ভূমিসেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে, মাত্র পাঁচ দিনের জন্য সেবাগুলো বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও, দেড় মাসেও এটি পূর্ণাঙ্গভাবে সচল হয়নি।
নতুন সফটওয়্যার সংক্রান্ত নানা সমস্যা উঠে এসেছে, বিশেষ করে নামজারি সংক্রান্ত। আগে নামজারির জন্য যেসব তথ্য যাচাই করা হতো, এখন তা করা সম্ভব হচ্ছে না। সার্ভার জটিলতা এবং নতুন সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে সরকারি স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে ভূমি মালিক এবং ব্যবসায়ীরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না, এবং সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন সফটওয়্যার সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে কোর্ট অব ওয়ার্ডস, ভিপি সম্পত্তি এবং খাসজমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগে জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে সার্ভেয়াররা যেসব পদক্ষেপ নিতেন, সেগুলোর কোনো ব্যবস্থা নেই নতুন সফটওয়্যারে। এতে সরকারি সম্পত্তি হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এদিকে, বিভিন্ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, নতুন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে গিয়ে তারা নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। গ্রাহকদের তথ্য অনুপস্থিত থাকা, নামজারি যাচাইয়ের সুযোগ না থাকা, এবং সরকারি ভূমি মালিকানায় সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তাঁদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. ইফতেখার হোসেন জানিয়েছেন, তারা আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন এবং সার্ভারের ধীরগতির সমস্যাটি তাদের জন্য অজানা নয়। তবে, তিনি জানান, এই সমস্যার সমাধান করতে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ, ভূমি মালিক এবং ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন, এবং দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাচ্ছেন।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম