শিরোনাম

দেশীয় অর্থে নির্মিত হচ্ছে বরিশালের মীরগঞ্জ সেতু

Views: 204

বরিশাল অফিস :: বরিশাল বিভাগীয় সদর সহ সারা দেশের সাথে মেঘনা পাড়ের মুলাদী ও হিজলা উপজেলার সরাসরি ও মেহেন্দিগঞ্জের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে মীরগঞ্জে অড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সেতু নির্মান কাজ চলতি বছরের শেষে শুরু হতে যাচ্ছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ কেবল স্টেইট এক্সট্রা ডোজ টাইপের এ সেতুটি নির্মানে ইতোমধ্যে নির্মান প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রাক-যোগ্যতা যাচাইয়ে প্রস্তাব আহবান করা হয়েছে।

আগামী মাসেই প্রাক-যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের খ্যাতিমান নির্মান প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রস্তাবনা যাচাই বাছাই করে যোগ্যতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে থেকে দর প্রস্তাব আহবান করা হবে। এসব দর প্রস্তাবের অর্থনৈতিক ও কারিগরি বিষয় সমূহ মূল্যায়ন শেষে চলতি বছরের মধ্যেই নির্মান প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে দ্রুততার সাথেই মীরগঞ্জ সেতুর নির্মান কাজ শুরু করতে চাচ্ছে সড়ক অধিদপ্তর।

মীরগঞ্জ সেতু নির্মানের লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্প-প্রস্তাবনা,ডিপিপি’ গত ৩১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকএর সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে। ডিপিপি অনুযায়ী ২০২৮-এর জুনের মধ্যে সংযোগ সড়ক ও নদী শাসন কাজ সম্পন্ন করে মীরগঞ্জ সেতু যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করা হবে । তবে এসব কিছুর আগে নির্মান প্রতিষ্ঠানই এ সেতুটির চূড়ান্ত নকশা প্রনয়ন করবে বলে জানা গেছে।

প্রায় ১ হাজার ৪৪২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যায় সাপেক্ষ মীরগঞ্জ সেতুটি আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর তৃতীয় সেতু। অপর দুটি সেতু ঢাকা-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের শিবচর এবং চাঁদপুর-শরিয়তপুর-মাদারীপুর মহাসড়কে অবস্থিত। মীরগঞ্জ সেতুটি নির্মিত হলে বরিশাল সহ সারা দেশের সাথেই নদ-নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন উপজেলা মুলাদী ও হিজলা’র সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবার পাশপপাশি পাশ^বর্তি মেহেদিগঞ্জের সড়ক পথও অনেকটা নির্বিঘœ হবে।

এক হাজার ৪৮৪ মিটার দীর্ঘ মীরগঞ্জ সেতুটির মূল অংশ ২টি এবাটমেন্ট ও এবং ১৭৫ মিটারের দুটি ও ৯৭ মিটারের দুটি পিয়ার সহ ৫৪৪ মিটার। সংযুক্ত ভায়াডাক্ট ৯৪০ মিটার। সেতু ও ভায়াডাক্ট সহ মোট পিয়ারের সংখ্যা থাকছে ৩০টি। সেতুটির দুই প্রান্তে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মিত হবে। যারমধ্যে টোলপ্লাজার সন্নিকটে রিজিট পেভমেন্ট এবং অবশিষ্ট ৩ হাজার ৯৭৩ মিটার ফ্লেক্সিবেল পেভমেন্ট এর সড়ক নির্মিত হবে। নির্মানের পরে আড়িয়াল খাঁ নদের সম্ভাব্য যে কোন ঝুঁকির হাত থেকে সেতুটি রক্ষায় ৪৬০ মিটার নদী তীর রক্ষাপ্রদ কাজে ৯৬.৬১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এছাড়া সেতুটির প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মানে ২১.৫৫ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে ৯৩.৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। অধিগ্রহনকৃত ভূমি থেকে ১০৫টি স্থাপনার ক্ষতিপূরণ বাবদও ৪৪.৭১ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

প্রকল্পটির আওতায় সেতু ও সংযোগ সড়কে ট্রাফিক সাইন, সিগন্যাল, রোড মার্কিং,টোল প্লাজা, সড়ক বাতি, ব্রীজ স্মার্ট হেলথ মনিটরিং সিস্টেম,বাস-বে, ডিভাইডার, ড্রেন, ফুটপাথ, কালভার্ট ও বনায়ন বাবদও প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয় হবে । পাশাপাশি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রুফ চেকিং পরামর্শক সেবা সহ প্রকল্প বাস্তবায়ন পরামর্শক সেবা বাবদও প্রায় ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানা গেছে।

গত ১৮ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রগ্রামিং কমিটির সভায় প্রকল্পটি চলতি অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপিতে অন্তর্ভূক্তির পরে ২১৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেতুটি নির্মানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্স এর একটি যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার আলোকে এ্যাপাইজাল রিপোর্টও প্রনয়ন করা হয়েছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও তার আলোকে প্রণীত এ্যাপাইজাল রিপোর্টে সেতু ও সংযুক্ত সড়কটিতে বার্ষিক যান চলাচলের হিসেব অনুযায়ী দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৪০১টি যানবাহন চলাচল করছে। যা প্রতিবছর গড়ে ১০ভাগ করে বৃদ্ধি পাবে। উপরন্তু সেতুটি নির্মিত হলে সর্বসাধারণের ভ্রমণ সময় হ্রাস সহ যানবাহনের পরিচালন ব্যয় বাবদ প্রায় ৪০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি সেতুটি নির্মিত হলে অর্থনৈতিক লাভবানের হার বছরে প্রায় ১৯% পর্যন্ত হতে পারে বলে সম্ভাব্য হিসেব করা হয়েছে।

তবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলের বিশাল এ প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হিসেবে অবিলম্বে প্রশাসনিক অনুমোদন সহ ভূমি অধিগ্রহণের জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন। যদিও সেতুটি নির্মানে ভূমি অধিগ্রহণের জটিল প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। যেকোন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় এখনো আমাদের দেশে বছর পার হয়ে যায়। আর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হলে প্রকল্পটির বাস্তব অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অনেকে। তবে সে লক্ষে ইতোমধ্যে সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *